রচনাঃ শিশুশ্রম


 শিশুশ্রম

ভূমিকাঃ
ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।

শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজ যারা শিশু আগামী দিনে তাদের হাতে ন্যস্ত হবে দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব কিন্তু নানা কারণে শিশুরা আজ উপযুক্ত পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত। জীবিকার প্রয়োজনে তারা বধ্য হচ্ছে হাড়ভাঙা শ্রমদানে। তাই এ শ্রমজীবি শিশুদের নিয়ে ক্রিশ্চিনা রসেটি তাঁর করুণ আর্তি ব্যক্ত করেছেন তাঁর লেখা “Cry of the Children ”

শিশুশ্রমের কারণঃ নানা কারণে শিশুশ্রম সমাজে শিকড় গেড়ে বসেছে। এখনও আমাদের দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা শতকরা প্রায় সত্তর ভাগ। এরা দারিদ্র্যের জ্বালায় নিজেদের সন্তানদের শিশু-শ্রমিকের বৃত্তি নিতে বাধ্য করে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সম-আর্থিক-বণ্টনের প্রতিক্রিয়ার ফলে শিশু শ্রমিকের সমস্যা জটিল আকার মাতার মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব ইত্যাদি কারণে শিশুশ্রমের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশে পিতৃ-মাতৃহীন শিশুরাই অধিক হারে শিশুশ্রমে লিপ্ত হয়। বেঁচে থাকার জন্য অনন্যেপায় হয়ে তারা এ পথে পা বাড়ায়। বিদ্যালয়ের প্রতি অনীহার আমাদের দেশে শিশুশ্রমের একটি অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশে শিশুশ্রমের ধরণঃ আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা এবং ইউনিসেফ পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী বিভাগীয় শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০১, পুরাতন জেলা শহরে ২০১, নতুন জেলা শহরে ১৮৭, থানা সদরে ১৩৩, পার্বত্য এলাকায় ২৩ এবং পল্লি এলাকায় ৯৪ ধরনের কাজে শিশুরা শ্রম দিচ্ছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে- কুলি, হকার, রিক্সাশ্রমিক, ফুল বিক্রেতা, আবর্জন সংগ্রাহক, ইট-পাথর ভাঙা. হোটেল শ্রমিক, বুননকর্মী, মাদক-বাহক, বিড়িশ্রমিক, ঝালাই কারখানার শ্রমিক, বেডিং স্টোরের শ্রমিক ইত্যাদি। তা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ‘শিশুশ্রম’ শীর্ষক আর এক সমীক্ষায় দেকা যায়, কিন্তু বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও শিশুরা নিয়োজিত রয়েছে। যেমন- ইলেকট্রিশিয়ান, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনের কারখানায় কাজ, মাদকদ্রব্য বিক্রি ও বাহন ইত্যাদি। সমুদ্র-বন্দর এলাকায় শিশু শ্রমিকদের জোর করে মাফিয়া চক্রান্তে লিপ্ত করানো হয়। এ উদ্দেশ্যে প্রচুর সংখ্যক শিশু অপহরন করে পার্শ¦বর্তী দেশসহ অন্যান্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। চুরি, ছিনতাই, ভিক্ষাবৃত্তি প্রভৃতি কাজে এদের লাগিয়ে এক শ্রেণির সমাজবিরোধী লোক প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। অধুনা পোশাক শিল্পের হাড়ভাঙা খাটুনিতেও শিশুদের নিযুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া শহরবাসী ভদ্রলোকদের বাসার শিশুরাই প্রধান শ্রমিক হিসেবে প্রধান্য পায়।

শিশুশ্রম ও নৃশংসতাঃ শিশুদের শ্রমিকবৃত্তিতে নিয়োগ প্রাচীনকাল থেকেই চলে এসেছে। বর্তমানে সভ্য দেশসমূহে মানুষ যেখানে বিবেকশক্তি ও স্বাধীনতাবোধের বড়াই করে, সেখানেও রয়েছে শিশুশ্রমের মতো মানবাত্মার অপমান ও নির্লজ্জতার উদাহরণ। বিশে^র সকল শিশু-শ্রমিকই মালিক পক্ষের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা তাদের শ্রমকর্তা কর্তৃক শারীরিক ও মানুসক উভয়ভাবেই নির্যাতিত হয়। দনিভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও তারা দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারে না। অদক্ষ শ্রমিক বলে তাদের নেই নির্দিষ্ট মজুরী; অথচ আছে অকথ্য নিপীড়ন। সামান্যতম অমনোযোগের অভিযোগে লাথি ও বেতের ঘা সহ্য করতে হয় তাদের । সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে অপরাধের জন্য পশু-আত্মা গৃহিণী বা গৃহস্বামী অমানবিক শাস্তি দিয়ে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের নৃশংস ঘটনা খবরের কাগজে প্রকাশ পাচ্ছে। এ ছাড়াও কল কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত শিশু-শ্রমিকেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

শিশুশ্রমের পরিণতিঃ শিশুশ্রম একটি মানবতাবিরোধী কাজ। শুধু বাংলাদেশই নয় যে কোনো দেশের জন্যই এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কেননা, যে শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ স্রষ্টা, শিশুশ্রমের কারণে তারা হয়ে উঠে অযোগ্য এবং অকর্মণ্য। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা সামজিকভাবে হয়ে পড়ে পঙ্গু। অতিরিক্ত শ্রমদানের ফলে শিশুদের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, তারা ভোগে অপুষ্টিজনিত নানা রোগে। পরে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনীশক্তি ক্ষয় হতে থাকে এবং ভাঙা স্বাস্থ্য আর উদ্ধার হয় না। ফলে শিশূরা অভিশপ্ত জীবন নিয়ে সামাজে বেড়ে উঠে।

শিশুশ্রম বন্ধে আমাদের করণীয়ঃ বাংলাদেশে শিশু ও নারী নির্যাতন আইন ১৯৯৫’ বলবৎ থাকলেও এর মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় নি। বস্তুত কেবল আইন দিয়েই সকল সমস্যার বাস্তব সমাধান সম্ভব নয়। উপযুক্ত শিক্ষার প্রসার এবং দারিদ্র্য বিমোচন ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় । এ জন্য সরকারকে গ্রহণ করতে হবে শিশু শ্রমিকদের পুনবাসনের দায়িত্ব। পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাগুলোকে নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। এক কথায়, যে প্রকারেই হোক বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিশুশ্রম রোধ করতে হবে। অন্যকথায় জাতির ভবিষ্যঃ হবে অন্ধকার। তবে আশার কথা হচ্ছে, ‘কাজের বিনিময় শিক্ষা’ কর্মসূচি বাস্তাবায়নের ফলে ইতোমধ্যে অনেক দারিদ্র পিতামাতাই তাদের সন্তানদের কর্মস্থলের পরিবর্তে বিদ্যালয়ে পাঠাতে শুরু করেছেন।

উপসংহারঃ মানবতার বিকাশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিশুশ্রম রোধ করা আবশ্যক। শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ^ মানবতা সমাজ সোচ্চার। বিশ^ শিশু দিবসে শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতি বছর শিশুশ্রম বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। বিশে^র সচেতন মানুষের শিশুশ্রমের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে। এ সমস্যার সমাধানে প্রত্যেক রাষ্ট্রের সরকারও সদা সচেতন। কিন্তু তবু সার্থপর কিছু মানুষের জন্য এ মহৎ উদ্যোগ বারাবার বিঘিœত হচ্ছে। তাই আমাদের উচিত প্রত্যেক নাগরিকের মনে যাতে শুভ বুদ্ধির উদয় হয় তার জন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা ।

রচনাঃ ইন্টারনেট অথবা, বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা
Previus
রচনাঃ বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ  অথবা, ক্রিকেট ও বাংলাদেশ
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম