রচনাঃ বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ  অথবা, ক্রিকেট ও বাংলাদেশ


বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অথবা, ক্রিকেট ও বাংলাদেশ

ভূমিকাঃ  বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেট একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশ খুব অল্প সময়েই এই খেলায় সফলতা অর্জন করেছে। বিশ্ব ক্রিকেট বাংলাদেশের এই সফলতা সত্যিই গর্বের বিষয়। সোানার বাংলার দামাল ছেলেরো আজ ক্রিকেট বিশ্বে সাফল্যের পতাকা উড়িয়ে উজ্জ্বল করেছে দেশের সম্মান। তাই এ দেশের মানুষের কাছে ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত আনন্দের গর্বের ও অহঙ্কারের।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আদিকথা / বাংলাদেশ ক্রিকেটের সূচনাঃ  স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে বাংলাদেশে ক্রিকেটের হাতেখাড়ি ঘটে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একচোখা স্বাভাব ও স্বার্থপরতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে অন্যান্য সেক্টরের মতে বাংলাদেশ ক্রিকেটও পৃষ্ঠপোষতার মুখ দেখেনি। তাই এ সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু দুর্মার বাঙালি জাতি তাদের অর্থনৈজির ও রাজনৈতিক মুক্তির আন্দোলনের সাথে সাথে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সযত্নে আগলে রেখেছিল; যার ফলে ক্রিকেটে আমাদের আজকের ও অবস্থান।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিঃ  স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলা শুরু হলেও দীর্ঘকাল এটি সাফল্যের মুখ দেখেনি বললেই চলে। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ যখন অবকাঠামোগত বিনির্মানে হাত দেয়, তখন ক্রিকেটের প্রতিও সবিশেষ যত্নবান হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আই.সি.সি’র সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে। আই.সি.সি’র সদস্য হওয়ার পর বাংলাদেশ নিজেদের নৈপুন্য উপস্থাপনের সুযোগ পায়।

আই.সি.সি ট্রফিঃ  বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে ১৯৯৭-র আই.সি.সি ট্রফিতে। কিন্তু সে প্রতিযোগিতায় একটা সময় বাংলাদেশের আশার তরী ডুবতে বসেছিল। এ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রাউন্ডের সর্বশেষ খেলা ছিল হল্যান্ডের সঙ্গে। হল্যান্ডের সাথে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাত্র ১৫ রানে ৪টি মূল্যবার উইকেটের পতন ঘটে। কিন্তু সে সময়ের অধিনায়ক আকরাম খান ও তার সহযোদ্ধারা শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে সেমিফাইরালে উন্নীত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ সহজেই স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হয়। আর তখনই বাংলাদেশের বিশ^কাপ ক্রিকেট খেলা নিশ্চিত হয়।

ওয়ানডে স্ট্যাটাস ও বাংলাদেশঃ  ১৯৯৭ সালে আই.সি.সি ট্রফি জেতার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ওয়ানডে স্ট্যাটাসের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্তা আই.সি.সি’র কাছে জোর দাবি জানায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আাই.সি.সি ১৯৯৮ সালে বাংলাাদেশকে ‘ওয়ারডে স্ট্যাটাস’ প্রদান করে।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও বাংলাদেশঃ  ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারে মতো স্বপ্নের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয় এবং অসাধারণ নৈপুন্য প্রদর্শন করে। সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটের পরাশক্তি পাকিস্তান এবং নবাগত স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্ব তথা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে দেশ ও জাতিকে চরম হতাশ করে ২০০৩ সালে। তারপর বিশ^কাপ জয়ী শ্রীলংকার কোট ডেভ হোয়াটমোরকে বাংলাদেশ দলের কোচ নিয়োগ করা হয়। তাঁর সুদক্ষ প্রশিক্ষণ ও পরিচালনায় বিশ^চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে পরিজিত করে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেয়। কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় করে ২০০৭ সালের বিশ্ব কাপের প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় পর্বে পা রাখে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্রিকেট পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করে দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ক্রিকেটে বাংলাদেশ তাদের মিশন শেষ করে ১৬ দলের মধ্যে সপ্তম স্থান অর্জনের মধ্য দিয়ে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডসহ আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডকে হারানোর পরও বাংলাদেশ সুপার এইটে উঠতে ব্যর্থ হয়।

টেস্ট ক্রিকেট ও বাংলাদেশঃ  ‘ওয়ানডে স্ট্যাটাস’ পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ‘টেস্ট স্ট্যাটাস’ এর জন্য আই.সি.সি’র কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। ১৯৯৯ এর বিশ্বকাপ দুটো দেশের বিরুদ্ধের জয় লাভ করায় বাংলাদেশের দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠে। ফলে বিশ্বকাপ পরবর্তী আই.সি.সি সভায় বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। এরপর আই.সি.সি বির্ভিন্নভাবে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সম্ভাবনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড ‘এ’ দলসহ বেশ কয়েকটি দল বাংলাদেশ সফর করে এবং তারা বাংলাদেশের সাথে বেশ কয়েকটি ওয়ানডে, ৩দিনের ও ৪দিনের ম্যাচে অংশ নেয়। এ খেলাগুলোর ফলাফল. বাংলাদেশি ক্রিকেটের অবস্থান ও অবকাঠামোগত সম্ভাবনাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে আাই.সি.সি ২০০০ সালের ২৬ জুনের সভায় সবগুলো টেস্ট প্লেয়িং দেশের সমর্থনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রদান করে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এটি এক বিরল অর্জন। আর ইতোমধ্যে টেস্ট ম্যাট জয় করে বাংলাদেশ তাদের যোগ্যতা প্রমাণও করেছে। কারণ বিশ্বের কোনো দেশই টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর এত তাড়াতাড়ি টেস্ট ম্যাট জয় করতে পারেনি।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫ ও বাংলাদেশঃ  সম্প্রতি শেষ হয়ে গেল বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫। বিশ্বকাপের এ আসরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোয়র্টার ফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করে। বাংলাদেশের জয়রথ আরও এগিয়ে যেতে পারত ; কিন্তু নিলৃজ্জ আম্পায়ারিং এর শিকার হয়ে বাংলাদেশ ভারতের সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে পরাজিত হয়। এ দিন মাঠের দুই আম্পায়ার পাকিস্তানের আলিমদার ও ইংল্যান্ডের ইয়ান গোল্ড এবং টিভি আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ডেভিস বাংলাদেশের বিপক্ষে কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত দেন, যা বিশ^ব্যাপী সমালোচিত হয় এবং অনেক তারকা খেলোয়াড় এর নিন্দা জানান, বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল সমর্থকেরাও ক্ষোভে কেটে পড়ে।

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিঃ শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২০১৫-এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জনের ঝুলি বেশ পরিপূর্ণ। এ বারই বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার কীর্তি স্থাপন করেন। তিনি হলেন মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি পরপর দুটি ম্যাচে শতরান করেন, যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি উল্লেযোগ্য ঘটনা। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯টি উইকেট লাভ করেন তরুন উদীয়মান ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। সবোপরি বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড় এই বিশ্বকাপে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। এরই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ দল, ১৯৯২ সালের বিশ^কাপ জয়ী পাকিস্তানকে ওয়ানডে ক্রিকেটে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জয় করার গৌরব অর্জন করে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দল একাদিখ ওয়ানডে সিরিজ জয় করেেেছ। তাই আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ একদিন ক্রিকেটের পরাশক্তিতে পরিণত হবে, জয় করবে বিশ্বকাপে।

ক্রিকেটের মনোন্নয়নে করণীয়ঃ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করতে হবে; যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচক ও বিসিবির সদস্য নির্বাচন অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশি বেশি টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। এ পদক্ষেপগুলো গুহীত হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে।

উপসংহারঃ  শুরু থেকেই ক্রিকেট ও দেশের অর্জন নিঃসন্দেহে আামদেরকে অনেক আশাবাদী করে। ইতোমধ্যে জনপ্রিয় এ খেলায় মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ^বাসীর দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। দেশের সরকার ও খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত ক্রিকেটে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রেখে দেশের মর্যাদাকে সুসংহত করা।

রচনাঃ শিশুশ্রম
Previus
রচনা (প্রবন্ধ) “ক্রিকেট খেলা”
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম