রচনা(প্রবন্ধ)“পিতামাতার প্রতি কর্তব্য”


পিতামাতার প্রতি কর্তব্য

ভূমিকাঃ এই পৃথিবীর মাতা পিতাই আমাদের জীবনের উৎস। তাদের স্নেহ সিক্ত আদরযত্ন আর প্রাত্যাহিক মঙ্গল কামনায় আজ আমরা ধরনীর আলো বাতাসে মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিচরণ করছি। মূলত তাদের স্নেহ সিক্ততা ছাড়া এই অবনীপরে আমদের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যেত না। আর এমনি মঙ্গলকামী ও আশীর্বাদের ভান্ডার মাত পিতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যে কত ব্যাপক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সন্তানের জন্য মাতা পিতার আত্মত্যাগঃ মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য পালন সর্বোচ্চ দায়িত্ব বলে বিবেচিত হওয়ার মূল কারণ সন্তানের জন্য মাতা পিতার আত্মত্যাগ। মা আমদের জন্য দশ মাস দশ দিন সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেন। মা আমাদের গর্ভে ধারণ করে এবং প্রসব বেদনার যে যন্ত্রনা সহ্য করেন, তার ঋণ কোনোদিন পরিশোধ করার মতো নয়। জন্মগ্রহনের পর আমরা পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় থাকি। তখন পিতামাতার তাদে সুখ শান্তির কথা চিন্তা না করে আমাদের গড়ে তোলেন। পিতা সন্তানের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যদি অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করেন। মাতা-পিতা সন্তানকে সুশিক্ষিত , চরিত্রন হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে অপ্রাণ চেষ্টা করেন। সন্তানের সুখই পিতা-মাতার সুখ। সন্তানের মুখে হাসি ফুটলে তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। সন্তান অসুস্থ হলে পিতা মাতা বিনিদ্র রজনী যাপন করে। সন্তান বিপথগামী বা প্রতিবন্ধী হলেও মাতা-পিতা কম, সহানুভুতিম ও ভালোবাসা অনুভব করে না। সন্তানের জীবনের সমগ্র সফলতার মাতা-পিতার অবদান থাকে। তাই মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য সীমাহীন হয়ে উঠে।

মাতা-পিতার প্রত্যাশাঃ “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে” প্রত্যেক সন্তানের জন্য মাতা-পিতার এ এক শাশ্বত কামনা। মাতৃগর্ভে মায়ের দেহের বিন্দু বিন্দু রক্তই এক সময় আমাদের অস্তিত্বের একমাত্র অবলম্বন ছিল। আর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মাতা-পিতাই আমাদের একান্ত আপন, মঙ্গলকামী। মাতা-পিতাই সন্তানের মঙ্গল কামনায় সর্বদা তটন্থ থাকেন। শিক্ষায়-দীক্ষায় , কাজে কর্মে সন্তানকে একজন আদর্শ মানুষরুপে গড়ে তোলাই প্রতিটি মাতা-পিতার একমাত্র আরাধ্য বিষয়। সন্তানের মঙ্গলের জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা মাতা-পিতা করেন না। একসময় আমাদের সবচেয়ে আপনজন এ মাতাপিতাই অক্ষম হয়ে গড়ে। তখন মাতাপিতা আমাদের কাছে সেবা প্রত্যাশা করেন। সন্তানের নিকট থেকে সৌজন্যমূলক আচরণ প্রত্যাশা করেন। তাই আমাদের উচিত মাতাপিতার প্রতি যত্নশীল হওয়া।

মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যঃ নানাবিধ কর্তব্য-কর্মের যোফল মানবজীবন । আর কর্তব্য কর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ এ জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য পালন। পবিত্র কোনআনে আল্লাহ ঘোষনা করেন, “তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং মাতাপিতার সাথে উত্তম আচরণ কর।” উল্লিখিত বাণী থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, কোনো অবস্থাতেই মাতা-পিতার সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। আমাদের শৈশবে মাতা-পিতা এতই দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেন, যার ঋণ কোনো দিন শোধ হবার নয়। মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যের তাগিদ দিয়ে বিশ^ কর্তব্য পালনের আরও তাগিদ দিয়ে বলেন, “পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতার অসুন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসুন্তুষ্টি। ” হিন্দু ধর্মে উল্লেখ আছে, “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী” অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমী স্বর্গ অপেক্ষা গরিয়সী। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মাতা-পিতার আদেশ নিষেধ মেনে চলা সন্তানের অপিহারর্য কর্তব্য। মাতা-পিতার প্রতি অবাধ্যতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বরং এরূপ গুনাহের জন্য পরকালে অবধারিত শাস্তির পূর্বে দুনিয়াতেও তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। এ সম্পর্কে মহানবি ( সা) বলেন, “আল্লাহ তাআলা তাঁর ইচ্ছামতো বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দেন। কিন্তু- মাতা-পিতার অবাধ্যতার গুনাহ মাফ করেন না বরং এই গুনাহগারকে পার্থিব জীবনে মৃত্যুর শাস্তি দিয়ে থাকেন।” সর্বদা মাতা পিতার সাতে ভদ্রতা ও নম্রতার সাতে মার্জিত ভাষায় কথা বার্তা বলা প্রত্যকটি সন্তানের কর্তব্য। তাছাড়া মাতা-পিতার বৃদ্ধবস্থায় যখন তারা চলতে ফিরতে অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন তাদেরকে চলতে ফিরতে সাহায্য করা, রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে সেবা-যত্ন করা, প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য করা প্রত্যেক সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। মোট কথা, শৈশবে আমাদের অসহায় মুহুর্তে মাতা-পিতা যেমনি আমাদের একান্ত অবলম্বন ছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে বৃদ্ধাবস্থায় তাদেরকে ছায়ার মতো অনুসরণ করা প্রত্যেকটি সন্তানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষনা করেন, “ তোমরা মাতা-পিতার জন্য সর্বদা দোয়া প্রার্থনা কর হে আল্লাহ, আমার মাতা-পিতার শৈশবে যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে আমাকে লালন পালন করেছিলেন, আপনি তাদের প্রতি তেমনি সদয় হোন।”


মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য পালনের মহান দৃষ্টান্তঃ পৃথিবীর যারা যুগে যুগে স্মরণীয় ও বরণীয় আছেন, তাঁরা সবাই মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাঁদের জীবনী থেকে জানা যায়, তাঁরা মাতাপিতার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন। হযরত মুহম্মদ (সা:) আবু সিদ্দিক (রা.) হযরত ফারুক (র.) হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র.) প্রমুখ মাতাপিতাকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তাছাড়া নেপোলিয়ন, স্যার সৈয়দ আহমদ খান, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ব্যক্তিবর্গও তাদের মাতা-পিতার প্রতি অনুগত ছিলেন ।

উপসংহারঃ মাত-পিতার সন্তুষ্টির উপর আমাদের জীবনের সার্বিক কল্যান নিহিত । আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারে পরই মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন সকল ধর্মেই স্বীকৃত । কাজেই কোনো অব¯থাতেই মাতাপিতাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। কারণ মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য পালনের মধ্যেই রয়েছে ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ।

রচনা(প্রবন্ধ)“আমার প্রিয় গ্রন্থ/বই”
Previus
রচনা(প্রবন্ধ)“আমার প্রিয় শিক্ষক”
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম