রচনা(প্রবন্ধ)“আমার প্রিয় শিক্ষক”
আমার প্রিয় শিক্ষক
ভূমিকাঃ শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। একটি স্বপ্নময় সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে একজন আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা থাকে সর্বাগ্রে। তাদের সততা, নীতিবোধ জীবনের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে বেশ ক‘জন প্রিয় মানুষ গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাদের মধ্যে আমার প্রিয় শিক্ষক জনাব ফোরকান আলীর নাম আমার কাছে রাতের আকাশের ধ্রুবতারার মতোই উজ্জ্বল। তার নীতি-নির্দেশনা, চিন্তা-চেতনা জীবনবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি আমার জীবন গঠন প্রক্রিয়ায় সবসয়য়ই ক্রিয়াশীল রয়েছে। প্রথম পরিচয়ঃ আমি তখন প্রথম শ্রেণির ছাত্র্ বাবার কোলে চড়ে প্রথম যেদিন দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই সেদিনই কাকতালীয়ভাবে আমার এই প্রিয় শিক্ষকের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। কাকতালীয়ভাবে বলছি এজন্য যে, তিনি ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠের উত্তর দিকে অবস্থিত দাসপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাবা যখন আমাকে প্রধান শিক্ষক সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কক্ষে বসিয়ে চলে আসছিলেন,তখন হঠাৎ কী জানি কী ভেবে আমি গগন বিদারী আর্তচিৎকার ফেটে পড়েছিলাম। বোধকরি আমার সমগ্র অস্তিত্ব বাবাকে প্রাণপণে জানিয়ে দিতে চাচ্ছিল যে, এই অপরিচিত পরিমন্ডল আমার না, আমাকে এখানে ফেলে যেও না, আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও, বাবা। বাবা তখন কোনোভাবেই আমাকে নিরস্ত করতে পারছিলেন না, তখন কোথাথেকে যেন হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়েছিলেন ফোরকান আলী স্যার। তখনও তিনি আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত। আমি জানি না কী ছিল তাঁর ধীর, স্থির ও সাবলীল বাচনভঙ্গিতে। শুধু এটুকু জানি, সেদিন তাঁর কথার মধ্যে আমার ছোট্ট অবুঝ মন খুঁজে পেয়েছিল এক অনন্ত নির্ভরতা, যে নির্ভরতা আজও আমার জীবনপথের পাথেয়।
আদর্শ শিক্ষকঃ আমার প্রিয় শিক্ষকের মোহনীয় সাহচর্যা ঋদ্ধ হয়েছে আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবন। কিন্তু যেদিন দাসপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এস ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম সেদিন থেকে তাঁর আরকটি অনন্য দিকের দ্বার আমার সামনে উন্মোচিত হতে শুরু করল। তিনি আমাদেরকে ইংরেজি ২য় পত্র পড়ান। প্রতিটি জটিল বিষয় তিনি এত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করেন যে, আমরা কেবল মুগ্ধ হয়ে শুনে যাই। শুধু তা-ই নয়, বাংলা, গনিত, ভূগোলসহ অন্যান্য বিষয়েও তাঁর রয়েছে অগাধ জ্ঞান। শিক্ষক হিসেবে তাঁর সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। তিনি একটা কথা প্রায়ই খুব গুরুত্ব দিয়ে আমাদেরকে বলতেন যে, ¯্রষ্টা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন অপরিমেয় শক্তি দিয়ে। দৃঢ় সংকল্প, পরিশ্রম আর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের মধ্যকার সেই অপরিমেয় শক্তিকে আবিষ্কার করতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই তোমরা তোমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেল্টপুলে বৃত্তি লাভসহ শিক্ষার্থী হিসেবে আজ পর্যন্ত আমার প্রতিটি অর্জনের পেছনেও মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন ফোরকান আলী স্যার।
অসাধারণ ব্যক্তিত্বঃ ফোরকান আলীর আমার প্রিয় শিক্ষকই নন, আদর্শ ব্যক্তিত্বও। তাঁর অনন্য ব্যক্তিত্ব আমরা সকলেই অভিভূত। তিনি সত্য ও সুন্দরের উপাসক। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না। তাঁর মধ্যে কর্তব্যনিষ্ঠ, নিরহঙ্করী ও উজ্জ্বল অমিত আদর্শের যে মায়াবি চিত্ত রয়েছে তা কখনো ভোলানো নয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তিনি আপন সন্তানের ন্যায় কাছে টেনে নেন। বিভিন্ন রসিকতার মধ্য দিয়ে তিনি ছাত্রদের খুবই আন্তরিক করে তোলেন। জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও তিনি খুব সাধারণ। উপসংহারঃ একজন শিক্ষক যে কীভাবে একটি হতাশাগ্রস্ত, নির্জীব প্রাণে নব প্রেরণা সৃষ্টি করতে পারেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফোরকান আলী স্যার। তাঁর দিকে তাকালেই মনে হয় যে, শিক্ষার্থীদের নিযে তাঁর সার্বক্ষণিক ভাবনা হচ্ছে-
এই সব মূঢ় , ম্লানম মূক মুখে দিতে হবে ভাষা ধ্বনিয় তুলিতে হবে আশা
দেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গন ফোরকান আলী স্যারের মতো আদর্শ শিক্ষাকের পদস্পর্শে সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক- এটাই আজকের প্রত্যাশা।
Share This Post