রচনা(প্রবন্ধ)“আমার প্রিয় গ্রন্থ/বই”


আমার প্রিয় গ্রন্থ/বই

ভূমিকাঃ মানুষের সবচেয়ে কাচের বন্ধু হলো গ্রন্থ বা বই। আনন্দের অপর নাম বই। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে শ্রান্ত ক্লান্ত শরীর ও মনে অনবিল প্রশান্তি পরশ বুলিয়ে দিতে পারে কেবল একখানি ভালো বই। বই জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞান ও আনন্দ-এ দু’য়ের অপরুপ সমাবেশ ঘটিয়ে বই একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে ।মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এ তিনকালের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করে দেয় বই। মোটকথা, মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভূতি নিজের বুকে নিয়ে অনাগতকালের পাঠকদের জন্য চির অপেক্ষামাণ হয়ে রয়েছে বই বা গ্রন্থ। বইয়ের এ গুরুত্ব উপলব্ধি করেই আমি অসংখ্য বই পড়েছি, যার মধ্যে ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি আমার মনে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। গ্রন্থপাঠের কারণঃ পৃথিবীতে দুঃখ-কষ্ট , শোক-তাপ, হতাশা-অবসাদে জর্জরিত মানুষ গ্রন্থ পাঠে সর্বোচ্চ আনন্দ লাভ করতে পারে। বিখ্যাত মনীবী লিও টলস্টয়ের ভাষায়, “Three things are essential for life and these are books, books and books.” আবার ভিনমেন্ট স্টারেট ভাষায়, “When we buy a book we buy pleasure.” অর্থাৎ আমরা বই কেনার সাথে সাথে আনন্দও কিনি। মানবজীবন যখন বিভিন্ন সমস্যার জর্জরিত থাকে, পার্থিব জগতের প্রতি মনটা যখন বিষিয়ে উঠে তখন গ্রন্থ পাঠ মানুষের মনে এমন এক জগৎ তৈরি করতে পারে যার জন্য কোনো দুঃখকে দুঃখ কিংবা কষ্টকে কষ্ট বলে মনে হয় না। গ্রন্থ মানুষের মধ্যে এমন এক জগৎ তৈরি করে দিতে পারে যার মধ্যে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, “সংসারের জ¦ালা-যন্ত্রনা এড়ানোর প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া, যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, ভবযন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।” আর গ্রন্থ পাঠ ই সেই ভুবন সৃষ্টিতে বেশি সাহায্য করতে পারে। গ্রন্থ পাঠকদের যে শুধু আনন্দই দেয় তা নয় বরং সভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে সে কাজ করে।কখনো কখনো আমরা সংকীর্ণতা ও কূপমন্ডূকতার শিকার হই, মনের অফুরন্ত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হই। বই আমাদের সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তুলে স্বর্গীয় আনন্দ লাভে সহায়তা করে। এজন্যই আমি বইপড়াকে প্রিয় শখ হিসেবে বেছে নিয়েছি।

আমার প্রিয় গ্রন্থঃ গ্রন্থ পাঠ আমার প্রধান শখ। কারণ বই পড়ে আমি যে আনন্দ খুঁজে পাই, তা আর অন্য কোনো কিছুতে পাই না। আমার এ যাবৎ বেশ কিছু ভালো বই পড়ার সুযোগ হয়েছে। যেমন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের-চোখের বালি, নৌকাডুবি; শরৎচন্দ্র চট্টোপধ্যায়ের -দত্তা, পথের দবি, চরিত্রহীনা প্রভৃতি। কিন্তু এসব বইয়ের মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে জহির রায়াহন উপন্যাস রচিত উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’ । এ গ্রন্থটি আমি যতবারই পড়ি. ততবারই মুগ্ধ হই। এ গ্রন্থটি আমার প্রিয় গ্রন্থ।

প্রিয় গ্রন্থ হওয়ার কারণঃ ‘হাজার বছর ধরে” গ্রন্থটি আমার অত্যন্ত প্রিয় হাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ গ্রন্থ আবহমান পূর্ববাংলার তথ বর্তমান বাংলাদেশের গ্রামীন জীবন কাহিনী হয়েছে। জহির রায়হান তাঁর লেখনীর মাধ্যমে গ্রাম বাংলার নিম্ন বিত্ত মানুষের হাসি-কান্ন, মান-অভিমান, রোগ-শোক, জরা-মৃত্যু, হিংসা-দ্বেষ, প্রেম-প্রীতির, বাধঁনে আবদ্ধ জীবনের চিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে অঙ্কন করেছেন। এখানে গায়ে গা লগিয়ে মানুষের বসবাস, এতটুকুতেই শত্রুতা আবার প্রয়োজনে মিত্রতা ও ঐক্যবদ্ধতা। সংস্কারে আবদ্ধ, দুর্যোগে সর্বস্বান্তে অসহায় পূর্ব বাংলার গ্রামীণ জীবন কুসংস্কারচ্ছন্ন। তারপরও স্বাভাবিক নিয়মে দিন যায়, রাত আবার দিন আসে। সে পুরনোকে নিয়েই মুলত এ উপন্যাসে আবহমান বংলার গ্রামীন জীবনের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে আজও এর প্রতিফলন আমরা বাংলার পল্লি অঞ্চলে দেখতে পাই । আমি গ্রামে বাস করি। এ উপন্যাসটি পড়ার সময় আমার মনে হয় এই তো সেদিন অমুকের ঘরে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল, অমুক চাচার বাড়িতে না এমন কিছুই হলো কয়েকদিন আগে। এটি পড়ে আমার মনে হয় আমার গ্রামে, আমার আশেপাশে ঘটে যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনার প্রতিরূপ হলো এ উপন্যাস। আমি বিমোহিত হয়ে গ্রন্থটি পড়ি, আর এ সময় পরিপাশ্বিকতা, চরিত্র সবকিছু মনের গভীরে একান্ত আপন অনুভূতিতে উপলব্ধি করি। আর এ জন্যই ‘হাজার বছর ধরে’ গ্রন্থটি আমার এত প্রিয়। উপন্যাসের বিচরঃ ঔপন্যাসিক জহির রায়হান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিপুন শিল্পীর ন্যায় আমাদের সামনে আবহমান গ্রাম-বাংলার নি¤œবিত্ত মানুষের জীবনযাপনের এক অনবদ্য ভাষাচিত্র উপস্থাপন করেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখি। জহির রায়হান উপন্যাসের নাম ‘হাজার বছর ধরে’ দিয়ে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জীবনধারার হয়তো পরিবর্তন ঘটতে পারে কিন্তু ঘটনার পরম্পরা কিংবা জীবনবোধের পরিবর্তন খুব একটা হয় না। আর অদূর অবিষ্যতে যে এ পরিবর্তন হবে তারও নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। আর এ গ্রন্থটির এসব দিক আমাকে আলোড়িত করেছে। আমি একাত্ম হয়ে গেছি এর বক্তব্যের সাথে। তাই এটি আমার প্রিয় গ্রন্থে পরিণত হয়েছে।

উপসংহারঃ আমি বই পড়তে ভালোবাসি। বই আমাকে আনন্দ দেয়, এক অকৃত্রিম বন্ধুর মতো আমাকে সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়। যেমন আমার প্রিয় গ্রন্থটি আমাকে জীবনের প্রকৃত চিত্র উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। আমি মনে করি প্রত্যেকটি মানুষের ভালো বই পড়া উচিত। কারণ বই পড়ার অভ্যাস জীবন সম্পর্কে এমন কিছু ধারণা দিয়েছে যা অন্য কিছুই আমাকে দিতে পারেনি।

রচনা (প্রবন্ধ)“জঙ্গিবাদ”
Previus
রচনা(প্রবন্ধ)“পিতামাতার প্রতি কর্তব্য”
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম