সংবাদ পত্র - রচনা


সংবাদ পত্র অথবা, 
সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকাঃ আধুনিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ বাহন সংবাদপত্র। সংবাদপত্র সমস্ত বিশ্বের নতুন নতুন খবর নিয়ে প্রতিদিন সকালে আমাদের দ্বারাপ্রান্তে এসে হাজির হয় । গণতান্ত্রিক যে কোনো দেশে তা সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের  দর্পণ । সমাজ গঠনের দৈনন্দিন পরিস্থিাতির সঙ্গে সম্পৃক্ততারয় এবং নিরন্তর তার বস্তনিষ্টা উপস্থাপনায় সংবাপত্র শক্তিশালী গণমাধ্যম। জনমতের প্রতিফলনে ও জনমত গঠনে সংবাদপত্র পালন করে শক্তিশালী ভূমিকা, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বহু দল ও মতের ধারক- বাহক হিসেবে সংবাদপত্র সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে।

সংবাদপত্র আবির্ভাবের ইতিহাসঃ সময়ের প্রয়োজনে আর্বিভাব ঘটেছে সংবাদপত্রের । সংবাদপত্রের প্রচলন প্রথম কোন দেশের শুরু হয তার সঠিক প্রমাণ এখণও পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায় , কগজ আবিষ্কারের পর একাদশ শতাব্দীতে চীনদেশে সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয়। ভারতে মুঘল শাসনামলে হাতে লেখা সংবাদপত্রের প্রচলনহয় ভেনিসে। তারপর রানি এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ভারত উপমহাদেশে ‘বেঙ্গল গেজেট’ নামে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৭৪৪ সালে। ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর মিশন থেকে বাংলা ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়। তারপর ১৮২২ সালে সাপ্তাহিক সমাচার চন্দ্রিকা ’ ১৮২৯ সালে সাপ্তাহিক ‘ বঙ্গদূত এবং ১৮৩৯ সালে সাপ্তাহিক সংবাদ প্রভাকর, ১৯২৩ সালে কল্লোল ১৯৪১ সালে সবুজপত্র প্রকাশের মদ্যে দিয়ে সংবাদপত্রের ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়ে উঠে।

সাংবাদপত্রের প্রকারভেদঃ মানুষের ছোট বড় নানা কৌতুহল মেটাতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সংবাদপত্রের নানা রূপান্তর ঘটেছে। সংবাদপত্রের নান প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন দৈনিক, সাপ্তাহিকম পাক্ষিকম মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি। তবে শেষোক্ত সংবাদপত্রগুলো মধ্যে সংবাদের চেয়ে গল্প , প্রবন্ধ , সমালোচনা, বৈজ্ঞানিক আলোচনা ইত্যাদি বেশি থাকে।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র: বাংলাদেশে ছোট বড়, সরকারি বেসরকারি অকেগুলো, সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে দৈনিক ইত্তেফাক দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক যুগান্তর , দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক সমকার, দৈনিক আমার বাংলাদেশ অবজারভার, নিউ এজ, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস , মর্নিং নিউজ ইত্যাদি দৈনিক পত্রিকা এবং বিচত্র্য বেগম রোববার ইত্যাদি সাপ্তাহিক পত্রিকা বিশেষ উল্লেযোগ্য । এ ছাড়া অনলাইনেরও এ সকল পত্রিকার খবর প্রকাশিত হয়, যা আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়তে পারি। সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহঃ সংবাদপত্রের খবর সংগ্রহ করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়টার উল্লেখযোগ্য । এছাড়া রয়েছে পিটিআই, ইউ.এন.আই ইত্যাদি। সোভিয়েতের সংবাদ সংস্থার নাম তাস’। বাংলাদেশে বাসস’ ও এনা নামে দুটো সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান আছে।

সংবাদপত্রের আদর্শঃ সংবাদপত্রকে অবশ্যই একটা আদর্শ মেনে চরা বাঞ্ছনীয়। আর এ আদর্শটা হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠা সংবাদ পরিবেশেন। সংবাদপত্রকে হতে হবে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী। জনগণের কল্যাণে সংবাদপত্র একদিকে যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, তেমনি ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠার জন্যও সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। সংবাদপত্রকে অবশ্যই ক্ষুদ্র স্বার্থের কথা চিন্তা না করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করতে হবে। আর তবেই সংবাদপত্র জনগণের আস্থ্য অর্জণে সক্ষম ও সার্থক হবে।

সংবাদপত্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতীক ভূমিকাঃ বিশ্বের রাজনীতি , সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলো, আমোদ প্রমোদ সকল ক্ষেত্রেই সংবাদপত্রের অবাধ পদচারণা। দৈনন্দিন জীবনের নানা অপরিহার্য তথ্যও প্রতিদিন আমাদের সামনে তুলে ধরে সংবাদপত্র। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যার, মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নানা রকম ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবরাখবর সংবাদপত্র আমাদের জানিয়ে দেয়। এভাবে দেশ ও বিশ্ব বাসীকে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করে। সংবাদপত্রে দুর্ঘটনার খবর পড়ে নিহত আহতের সন্ধানে ছুটে যেতে পারে তাদের আত্মীয় পরিজন। সম্রাজ্যবাদী কিংবা আগ্রাসী তৎপরতার যখন সভ্যতাকে গ্রাস করে, তখন সংবাদপত্র তার বিরুদ্ধে মানবতার জাগরত ঘটায় । পামানুবিক যুদ্ধ কিংবা স্নায়ুযুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্খা দেখা দিলে সংবাদপত্র শান্তির সপক্ষে নেয় সচেতন দায়বদ্ধ ভুমিকা। দেশে সাময়িকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ,জনগনের ত্রুটি চেপে ধরলে সংবাদপত্র তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের পটভুমি রচনা করে। গণআন্দোলনের পক্ষে নেয় কার্যকর অবস্থার । যেখানেই মানবতার লাঞ্ছনা , মূল্যবোধের অবক্ষয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিবেকের কšঠরোধ, সেখানেই সংবাদপত্রের কন্ঠস্বর নেয় প্রতিবাদী ভূমিকা।

সংবাদপত্র ও জনমত গঠনঃ সংবাদপত্রের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব গণসচেতনতা সৃষ্টি যা অন্য কোনো মাধ্যম এত প্রবলভাবে তৈরি করতে পারে না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যব¯থায় প্রকৃত ক্ষমতা থাকে জনগণের হাতে। ফলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও ভূমিকা জাতীয় অগ্রগতির পক্ষে কতটা সহায়ক এবং কতটা জনস্বার্থের পরিপূরক তা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ক্ষমতাসীনরা সবসময় তাদের পদক্ষেপকে জোর পলায় ইতিবাচক বলে প্রচার করে এবং বিরোধীরা তাকে একেবারেই প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু সংবাদপত্র উভয় পক্ষের মতামত , যুক্তি ও তথ্যনির্ভর আলোচনা প্রকাশ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের অভিমত গঠন করতে পারে। সংবাদপত্রের পাতায় জ্ঞানীগুণী ও বিশেষজ্ঞদের লেখা প্রবন্ধ ও অভিমত ,কলাম লেখকদের তর্কবিতর্ক , যুক্তিপ্রদান ও যুক্তি খন্ডন, পত্রিকার নিজস্ব সম্পদকীয় ও উপসম্পাদকীয়, চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি ইত্যাদি ইস্যুতে জনমত গঠনে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে।


আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের প্রভাবঃ আধুনিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের গভীর ও ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সংবাদপত্র প্রতিদিন আমাদের সামনে কেবল জাতীয় বিষয়বলিই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনকেও উন্মুক্ত করে করে এবং জনগণ তাদের করণীয় স্থির করে নিতে পারে। জনমত সৃষ্টিতেও সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম । জনশিক্ষা প্রচারেও সংবাদপত্র অগ্রগামী । সংবাদপত্রই সেই মাধ্যম, যা সমাজের নানা দুর্ণীতি ও কুসংস্কার দূর করে মানুষের নৈতিক মান উন্নত করে তুলতে সহায়তা করে। আলোকিত জীবন গঠনে, জনগণ ও গণশিক্ষা প্রচার ও প্রসারে সংবাদপত্রই অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।

আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের প্রভাবঃ আধুনিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সংবাদপ্রত্রের গভীর ও ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সংবাদপত্র প্রতিদিন আমাদের সামনে কেবল জাতীয় বিষয়বলিই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনকেও উন্মক্ত করে দেয়,। সংবাদপত্রে প্রচারিত বিভিন্ন তথ্য, আলোচনা , সমালোচনা প্রভৃতি জনগণের সামনে দেশের প্রকৃত চিত্রকে উন্মোচন করে এবং জনগণ তাদের করণীয় স্থির করে নিতে পারে। জনমত সৃষ্টিতেও সংবাদপত্রের ভূমিকা অরিসীম । জনশিক্ষা প্রচারেও সংবাদপত্র অগ্রগামী। সংবাদপত্রই সেই মাধ্যম, যা সমাজের নানা দুর্নীতি ও কুসংস্কার দূর করে মানুষের নৈতিক মান উন্নত করে তুলতে সহায়তা করে। আলোকিত জীবন গঠনে, জনগণ ও গণশিক্ষা প্রচার ও প্রসারে সংবাদপত্রই অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।

সংবাদপত্রের ক্ষতিকর প্রভাবঃ সংবাদপত্র জনকল্যাণের একটি বস্তুনিষ্ঠ মাধ্যম্ কিন্তু আজকাল কিছু সংবাদপত্রের পরিচালক ও সংবাদিকগণ জনকল্যাণের মহান উদ্দেশ্যকে ভুলে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা দলগত স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে সংবাদপত্রকে ব্যবহার করছেন, যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জাতীয় জীবনে। কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদপত্রের উস্কানিমূলক প্রচারণার জন্য দেশের মধ্যের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, মারামারি হানাহানি , হিংসা, বিদ্বেয় , কুৎসা ও মিথ্যা রটনা ব্যাপক আকার ধারণ করে । নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এসব সংবাদিকগণ জাতির বৃহত্তর কল্যাণের পাথে বিরাট বাধ্য হয়ে দাড়াঁয় যা দেশ ও জাতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।

উপসংহারঃ বর্তমানে সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মৌলিক অধিকার প্রথিষ্ঠায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমাদের দেশে ব্যাপক নিরক্ষরতা, পশ্চাৎপদতা ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে সমাজজীবনে আধুনিক ধ্যান ও বিজ্ঞামূখী চেতনা বিকাশে সংবাদপত্রের ভূমিকা হতে হবে কল্যানমূখী । সেক্ষেত্রে ,জনস্বর্থ ও মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানই সংবাদপত্রকে সত্যিকার অর্থে জনগণের কন্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান - রচনা
Previus
কম্পিউটার অথবা, কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন - রচনা
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম