রচনা (প্রবন্ধ) “আমার দেখা একটি বইমেলা”


আমার দেখা একটি বইমেলা

ভূমিকাঃ মেলা এদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ, আর মেলার জগতে মিলনপিয়াসী সভ্যতার কনিষ্ঠ সন্তান “বইমেলা” একটি লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের ভাব বিনিময়ের কেন্দ্রও বটে। এখানে ঘটে সভ্যতার প্রাণের চিহ্ন বিভিন্ন বইয়ের সমাহার। যেখানে দেশি-বিদেশি কোনো বই-ই বাদ যায় না। তাই কবির কন্ঠে ধ্বনিত হয়-
“হেথায় মিশেছে দিশি হতে বিপুল জ্ঞানের ধারা, শত মনীষীর চিন্তার বানী আনন্দে আকুল পারা।”

বইমেলাঃ  ‘মেলা’ শব্দের ব্যাকরণগত উৎস ‘মিল’ ধাতু। মেলার অর্থ মিলিত হওয়া। ‘বইমেলা’ সেই মিলন প্রসঙ্গের ইঙ্গিত বাহক। তাই বছরের কোনো এক সময়ে একটি নির্দিষ্ট উপলক্ষে কোনো স্থানে বইয়ের স্টল সাজিয়ে কিছু দিনের জন্য বই প্রদর্শন এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হলে তাকে বইমেলা বা গ্রন্থমেলা বলা হয়। পৃথিবীর সকল দেশেই এমন গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে এমন বইমেলা বসে।

বইমেলায় আমিঃ  বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বসেছে এখানে গ্রন্থমেলা। আমি সে মেলা দেখতে গিয়েছিলাম। এমন একটি মেলা না দেখলে আমার জীবনটাই অপূর্ণ থেকে যেত। বইমেলায় প্রবেশ করে আমিনিজেকে জ্ঞানের সাগরে হরিয়ে ফেলেছিলাম। কত জ্ঞানীগুনী, মনীবী নীরব ভাষায় এখানে কথা বলছে। আমি যেন কান পেতে হৃদয় খরে সে সব কথা শুনছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল এ সেই স্থান যেখানে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে আছে পৃথিবীর সকল জ্ঞানের কথা। আছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা। আছে সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসার কথা, আছে ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও ধর্মের কথা। আছে সৃষ্টির কথা এবঙ ধ্বংসের কথা। বিচিত্র এক জ্ঞানের সমাবেশ এ গ্রন্থমেলা।

মেলার পরিবেশঃ  বইমেলায় প্রবেশ করতেই প্রথমে পড়ে এর চোখ ঝলসানো তোরণদ্বার এবং আলোকসজ্জা। বইয়ের বিচিত্র প্রচ্ছদ দিয়ে সাজানো হয়েছে তোরণদ্বার। মেলার ভেতরে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ব্যাক্তিদের বাণী দিয়ে সাজানো হয়েছে- সে এক অপূর্ব দৃশ্য। যে দিকেই তাকাই, মন আনন্দে ভরে উঠে।

মেলার আয়োজনকারীঃ  এ গ্রন্থমেলার আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। প্রতি বছরই মহসমারোহ সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এ গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। দেশের খ্যাতনামা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাগণ এতে অংশগ্রহণ করে থাকে । দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লেখক ও মনীষীদের রচিত পুস্তকের সাথে পরিচয় ঘটানোর জন্যই এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার বর্ণণাঃ মেলার প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বই আর বই। ছোট-বড় প্রায় দুইশত বইয়ের দোকান। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা রঙের, নানা লেখকের, নানা ধরনের বই। দেখে মনে হয় এ যেন বইয়ের মিছিল। আমার তখন মনে হয়েছে আমি যেন গ্রন্থের সাগরে আনন্দে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছি। বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী, আবিষ্কার ইত্যাদির স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। যেখানে যাই সেখানেই বিস্ময়। মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানের কত উপকরণ গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করে রেখেছে। মনে মনে ভাবলাম সবগুলো বই যদি পড়তে পারতাম, কী জানি মজা হতো ! কত বিচিত্র মানুষের জ্ঞানের রাজ্য।

বইমেলার উপকারিতাঃ  বইমেলায় গিয়ে আমার মনে হয়েছে সারাবিশে^র মানুষের দরবারে উপস্থিত হয়ে আমি আমার দেশের অবস্থানটুকু যাচাই করতে সমর্থ হয়েছি। সর্বশ্রেণির মানুষই গ্রন্থমেলায় এসে উপকৃত হতে পারে। শিশু-কিশোর যুবক-বৃদ্ধ সবারই রুচিসম্মত বইয়ের সমাবেশ আছে এখানে। সর্বশ্রেণির পাঠক এখান থেকে প্রয়োজন মতো বই কিনতে পারে এবং বইয়ের বিপুল সমারোহ দেখে আনন্দ পেতে পারে। বিভিন্ন লেখন এবং বইয়ের সাথে পরিচিত হয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারে। বইমেলায় বই ছাড়াও নাট্যাভিনয়, গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নানা বিষয়ক বক্তৃতা, সেমিনার, বাচ্চদের আনন্দ লাভের নানা উপকরণও থাকে। এ ছাড়া পানাহারের ব্যবস্থাও দুর্লভ নয়।

বিদায় পর্বঃ  রাত দশটার দিকে আমি বইমেলা থেকে বিদায় নিলাম। আসার সময় মনে হয়েছে আমি যেন স্বর্গ থেকে বিদায় নিচ্ছি। মনে হয়েছে সুস্থ, সুন্দর, মঙ্গলময় একটা জগৎ ছেড়ে অসুন্দর একটা পৃথিবীতে চলে এলাম। বইমেলার স্বল্পকালীন এ অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই মধুময়।

রচনা (প্রবন্ধ) “ক্রিকেট খেলা”
Previus
রচনা (প্রবন্ধ)“বইমেলা”
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম