রচনা(প্রবন্ধ)“দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা”


দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

সূচনাঃ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ বিশ্বের মানবচিত্রে সগর্বে যে সার্বভৌম বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, তার মূলে কাজ করেছে জাগ্রত ছাত্রসমাজের গৌরবদীপ্ত সংগ্রাম। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে রয়েছে ছাত্রসমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই দেশ গঠনে ছাহ্রসমাজের ভূমিকা অনস্কীকার্য । তারাই পালন করতে পারে দেশ ও জাতি সুমহান পবিত্র দায়িত্ব, পারে বিশ্বের দরবারে দরবারে জাতিকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে। ছাত্রজীবনের মূল্যঃ ছাত্রজীবন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। ছাত্রজীবনই ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত রচনা করে। ইমরতের ভিত্তি সুগঠিত না হলে যেমন ইমরাত শক্ত হয় না, তেমনি বাল্যকালে উপযুক্ত শিক্ষা লাভ না করলে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনও সুগঠিত হয় না। সংস্কৃতে প্রবাদ আছে - “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ ” অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের মূল তপস্যা। এ দিকটায় প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রেখেই ছাত্রদের অগ্রসর হতে হবে। তবে লেখাপড়ার সাথে সাথে ছাত্রদের দেশ গঠনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করা বাঞ্ছনীয়। ছাত্ররা নানাভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারে। পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে দেশ ও জাতির মঙ্গলের কথা ভাবতে হবে। নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে। পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে দেশ ও জাতির মঙ্গলের কথা ভাবতে হবে। নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার এটাই প্রকৃত সময়। নিজেকে সংপথে পরিচালিত করা এবং প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার উৎকৃষ্ট সময় ছাত্রজীবন।

ছাত্রসমাজের আত্মত্যাগঃ ছাত্ররা তরুণ, দুর্বার ও সংগ্রামী । তারা উচ্ছল ও প্রাণবন্ত । দুর্দম পথের পথিক এ তরুণ ছাত্রদল সর্বাবস্থায় প্রস্তুত থাকে । অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর এবং শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করার মতো অবিচলিত শক্তির উৎস তারা। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিক হিসেবে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে আত্মত্যগের সুমহান দায়িত্ব নিয়ে প্রবল কমোদ্যমে কাজ করতে হবে। নৈতিকতার উন্নতি বিধান, যাবতীয় কুসংস্কার, সৃপ্রথা, অথ্যাচার, অবিচার, প্রভৃতি নির্মুল করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে ছাত্রসমাজকে । সকল প্রকার দুর্ণীতি দমনের বজ্রকঠিন শপথ তাদেরকেই নিতে হবে। দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করার সংগ্রামেও ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশ ও জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দিতে ছাত্রসমাজই রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা। জনসেবার মাধ্যমে দরিদ্রতা দূরীকরণের পথ ত¦রাণি¦ত করা, দেশ থেখে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করা এবং আত্মমুক্তির পথ অর্জনে ছাত্রসমাজের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। দেশ ও জাতির তরে নিবেদিত প্রাণ এ ছাত্ররাই জাতি গঠনে সর্বাগ্রে সহায়তা করতেহ পারে। এ জন্য শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষা করে এবং সামাজিক নানা সমস্যগুলোকে প্রতিহত করতে ছাত্রসমাজকে তৎপর হতে হবে।

জনসেবামূলক কাজঃ জনসেবার মতো ব্রত পালনে ছাত্রদের তৎপরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে বিদ্যমান শ্রেণিবৈষম্য দুর করে সকলকে উন্নয়নের পথে চালিত করতে ছাত্রসমাজ হতে পারে পথপ্রদর্শক। তারা দাঁড়াতে পারে দূর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাশে দিতে পারে সেবা, মৃতপ্রায়কে দিতে পারে হাসপাতালে , পরিতাক্ত শিশুকে পৌঁছে দিতে পারে শিশু সদনে, গৃহহারাকে দিতে পারে গৃহ। সজসেবায় নিজেদরেকে নিয়োজিত রেখে দেশ ও জাতির কাছে আপন মহিমায় উদ্ভসিত হয়ে উঠতে পারে ছাত্রসমাজ । নানা সেবামূলক সর্মকান্ডে অংশ নিয়ে জাতির কাছে নিজেদেরকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন করার এটাই উপযুক্ত সময়। তাই বলা যায়, ছাত্ররাই দুর্বলের বল, অসহায়ের সহায় এবং রোগীর সেবক।

পল্লি উন্নয়নঃ পল্লিই বাংলাদেশের প্রাণ। তাই পল্লি দেশেরই উন্নয়ন। পল্লি উন্নয়নে ছাত্রসমাজ এগিয়ে আসতে পারে। গ্রামে আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষি উন্নয়নে আধূনিক প্রযুক্তির সুফল সম্পর্কে নানা উপদেশ দিয়ে ছাত্রসমাজ প্রভূত সাহায্য করতে পারে। অবসর সময়ে ছাত্রসমাজ গ্রামে গিয়ে রাস্তা-ঘাট,নির্মান, খাল,পুকুর,খনন ইত্যাদি স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ করতে পারে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়ে ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগ থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে পারে। ছোটখাটো রোগের হাত থেকে রক্ষা এবং রোগের প্রতিকার সম্পর্কে গ্রামবাসীরা সচেতন করে তুলতে পারে। গ্রামাঞ্চল উন্নয়ন সাধিত হলে সমগ্র দেশে উন্নয়নের পথ সম্প্রসারিত হবে। সমগ্র দেশের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে এ গ্রামাঞ্চল্ তাই দেশ ও জাতির উন্নয়নের প্রদান শার্তই পল্লির উন্নয়ন সাধন করা। এ কাজে ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নিরক্ষরতা দূরীকরণঃ নিরক্ষরতা আমাদের জাতীয় জীবনে অভিশাপ। দেশের প্রায় ৪২ ভাগ লোক নিরক্ষর। নিরক্ষরকে অক্ষরজ্ঞান দান করার ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দেশের মানুষ যদি অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে তাহলে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। তাই গ্রামে-গ্রামে , মহল্লায় –মহল্লায় নৈশ বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করে নিরক্ষর লোকদেরকে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করে তোলার অভিযানে ছাত্রসমাজ অংশ নিতে পারে। নিরক্ষরতা দূর হলে মানুষ শিক্ষার আলো পাবে, সাধারণ মানুষ আধুনিক চেতনার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। সাধারণ মানুষকে এ বোধে উদ্দীপিত করার দায়িত্ব ছাত্র সমাজের । বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে এ দেশকে সামিল করতে ছাত্রসমাজকেই নিতে হবে এ গুরুদায়িত্ব। জনমত গঠনঃ দেশ ও জাতির উন্নয়মূলক নানা কর্মকান্ডে ও জানমত গঠনে ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সভা সমিতি ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজ দেশের শিল্প ও সংকৃতিতে জাগিয়ে তুলতে পারে। জনগণের মধ্যে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করে সমৃদ্ধ জাতি গঠনে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সাহিত্য-সংস্কৃতি চচার মাধ্যমে জাতির মানস গঠনে সাহায্য করতে পারে তারা। বিদেশি দ্রব্য বর্জন এবং স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহার সম্পর্কে জনমত গঠনের প্রচারাভিযানে ছাত্রসমাজ অংশ নিতে পারে।

দেশপ্রেমের শিক্ষাঃ স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। এ পবিত্র দায়িত্বে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে ছাত্রসমাজ। ছাত্ররাই দেশ ও জাতির মূল চালিকাশক্তি। দেশকে ভালোবেসে স্বদেশের প্রয়োজনে এগিয়ে আসার শিক্ষায় তারা দীক্ষিত । ছাত্রজীবনে যে দেশপ্রেমের উদ্ভব ঘটে তা তাদের মনে আজন্ম লালিত হয়। তাদের উপরই দেশ ও জাতির সফল তার অর্পিত থাকে। তাই তাদেরকেই সকল কাজে, দেশের বিপদে আপদে এগিয়ে আসতে হবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে। কবির ভাষায়-

“নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”

অতীতে আমাদের দেশের ইতিহাস ছাত্রসমাজের দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট প্রমাণ রয়েছে। দেশের সংকটময় অবস্থায় বীরদর্পে অগ্রসর হয়ে সকল শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে দুর্বার ছাত্রসমাজ। তাই ছাত্রজীবনে দেশপ্রেমের অর্জন দেশ ও জাতি গঠনে অত্যন্ত সহায়ক ও অরিহার্য।

উপসংহারঃ দেশ ওজাতি ছাত্রসমাজের ভূমিকা অপরিসীম। বিপথগামিতা এবং ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ থেকে ছাত্রসমাজকে মুক্ত থেকে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এতে দেশে প্রগতি আসবে- সমৃদ্ধির সূচনা হবে। তাদের কর্ম প্রেরণার দ্বারাই নির্মিত হবে দেশের প্রগতির ধারা। মারামারি ও হানাহানি পথ পরত্যাগ করে দেশের অস্তিতীশীল পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করে তুলতে পারে ছাত্রসমাজ। এ জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের লেজুরবৃত্তি না করে সুস্থ ও সৎপথে অগ্রসর হতে হবে তাহলেই দেশকে উন্নতির হরম শিখরে পৌছে দিতে তথা দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অনবদ্য হবে।

Completing Story “ A fox without tail ” Gazi Online School
Previus
বই পড়ার আনন্দ-রচনা
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম