ভাবসম্প্রসারণ “দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি।”


দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি।

মূলভাব: পৃথিবীতে সত্য ও মিথ্যা পাশাপাশি অবস্থান করে। জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই মানুষ সত্য ও মিথ্যাকে চিনতে শেখে। ভুল -ভ্রন্তির ভয়ে মানুষ কর্মবিমুখ হলে জীবনে কখনও সাফল্য আসবে না। সম্প্রসারিত ভাব: সত্য সূর্যালোকের ন্যায় স্বতঃপ্রকাশ । সত্য মানব জীবনের পরম আরধ্য বিষয়। কিন্তু এ সত্যের নাগাল পাওয়া সহজসাধ্য নয়। সত্য অন্বেষণের জন্য প্রয়োজন গভীর অন্তর্দৃষ্টিও কঠোর সাধনা। কেননা অগনিত ভুল আর মিথ্যায় সত্য চাপা পড়ে থাকে। সত্যকে উপলব্ধি করতে হলে অন্তরকে কলুষমুক্ত করে সত্যকে সহজভাবে গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া সত্যকে পাওয়ার সহজ কোনো পথ নেই। জীবনে বাস্তব অভিজ্ঞতার মানদন্ডেই সত্য-মিথ্যার যাচাই হয়। এজন্য মিথ্যা ছলনার ভয়ে জগৎ ও জীবনবিমুখ হয়ে কেউ যদি কর্ম জীবনে পা না বাড়ায় তবে হয়তো মিথ্যাকে ঠেকানো যাবে, কিন্তু সত্যকে উপলব্ধি করা যাবে না। তাই মহমতি গ্যাটে বলেছেন, “সত্যকে ধরো, প্রতারণায় অভ্য¯ত হয়ো না।” ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখলে যেমন ঘরের ভেতর সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না, তদ্রুপ আমরা যদি আমাদের মনের দরজা খুলে না রাখি, তাহলে জ্ঞানালোক অন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। জীবন ও জগৎকে সত্যিকার উপলব্ধির মাধ্যমেই আমাদের আত্মমুক্তি। রূপকে বাদ দিয়ে যেমন সত্য জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়, তেমনি দৃশ্যমান জগৎ ও জীবনকে বাদ দিয়ে সত্য জ্ঞান থেকে দৃষ্ট ফিরিয়ে নিয়ে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা রুদ্ধ করে যোগাসনের দ্বারা সত্যকে উপলব্ধি করা যায় না। কবির কথায়-

“ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুন্ধ করি যোগাসন-সে নহে আমার যা কিছু আনন্দ আছে দৃশ্যে গন্ধে গানে, তোমার আনন্দ রবে তা মাঝখানে।”

মন্তব্য: মানুষ ভুলের মোহে পথভ্রন্ত হবে এ ভয়ে জগৎ সংসার ও জাগতিক মোহবন্ধনকে পরিহর করলে বাস্তবের সঙ্গে জীবনের বাস্তব যোগ ঘটবে না। ফলে শেষ পর্যন্ত জীবনের সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না। ভুল-ভ্রান্তির মধ্যে দিয়েই মানুষ সত্য পথের সন্ধান পায়।

ভাবসম্প্রসারণ “দন্ডিতের সাথে- দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।”
Previus
ভাবসম্প্রসারণ “মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।”
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম