বহুব্রীহি সমাস - বিস্তারিত আলোচনা (বাংলা ব্যাকরণ)


বহুব্রীহি সমাস - বিস্তারিত আলোচনা

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোনো বুঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন- দশ আনন যার = দশানন।

এখানে ‘দশ’ ও ‘আনন’ এ দুই পদে সমাস হয়ে ‘দশানন’ সমস্ত পদটি হয়েছে। কিন্তু ‘দশানন’ পদটি ‘দশ’ ও ‘আনন’ সমস্যমান পদগুলো কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে দশ আনন (হাত) বিশিষ্ট ব্যক্তিতে বুঝাচ্ছে।

ক. বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যথা-

আয়ত লোচন যার = আয়তলোচনা

(স্ত্রী) মহান আত্মা যার = মহাত্মা

স্বচ্ছ সলিল যার = স্বচ্ছসলিলা,

নীল বসন যার = নীলবসান,

স্থির প্রতিজ্ঞা যার = স্থিরপ্রতিজ্ঞ

ধীর বুদ্ধি যার = ধীরবুদ্ধি।

খ. ‘সহ’ কিংবা ‘সহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ’ ও ‘সহিত’ এর স্থলে ‘স’ হয়।

যেমন-

বাদ্ধবসহ বর্তমান = সবান্ধব,

সহ উদর যার = সহোদর / সোদর।

এরূপ সজল, সফল, সদর্প, সলজ্জ সকল্যাণ ইত্যাদি। গ. বহুদ্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্নী, পুত্র, স্ত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দ গুলোর সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়।

যেমন-

নদী মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক,

বি (বিগত) হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক।

ঘ. বহুদ্রীহি সমাসে সমস্তপদে ‘অক্ষি’ শব্দের স্থলে ‘অক্ষ’ এবং ‘নাতি’ শব্দ স্থলে ‘নাভ’ হয়।

যেমন-

কমলেল ন্যায় অক্ষি যার = কমলাক্ষ,

পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ। এরূপ ঊর্ণনাভ।

ঙ. বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘জায়া’ শব্দ স্থানে ‘জানি’ হয় এবং পূর্বপদের ক্ছিু পরিবর্তন হয়।

যেমন –

যুবতী জায়া যার = যুবজানি

(যুবতী স্থলে ‘যুব’ এবং ‘জায়া’ স্থলে ‘জানি’ হয়েছে)।

চ. বহুব্রীহি সমাসে পরপদের ‘চূড়া’ শব্দ সমস্তপদে’ ‘চুড়া’ এবং ‘কর্ম’ শব্দ সমস্তপদে ‘কর্মা’ হয়।

যেমন-

চন্দ্র চূড়া যার = চন্দ্রচূড়

বিচিত্র কর্ম যার = বিচিত্রকর্মা

ছ. বহুব্রীহি সমাসে ‘সমাস’ শব্দের স্থানে ‘স’ এবং ‘সহ’ হয়।

যেমন-

সমান কর্মী যে = সহকর্মী

সমান বর্ণ যার = সমর্বণ

সমান উদর যাদের = সহোদর।

জ. বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘গন্ধ’ শব্দ স্থানে ‘গন্ধি’ বা ‘গন্ধা’ হয়।

যথা সুগন্ধ যার = সুগন্ধি,

পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার = পদ্মগন্ধি,

মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার = মৎস্যগন্ধা।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার। যথা-

১. সমানধিকরণ বহুব্রীহিঃ  পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানধিকরণ বহুব্রীহি সমান হয়।

যেমন-

হত হয়েছে শ্রী যার = হতশ্রী,

খোশ মেজাজ, যার = খোশমেজাজ,

এরকম হৃতসর্বস্ব, উচ্চশির পীতাম্বর, নীলকন্ঠ, জবরদস্তি, সুশীল, সুশ্রী, বদবখ্ত, কমবখ্ত ইত্যাদি।

২। ব্যাধিকরণ বহুব্রীহিঃ  বহুব্রীহি সমাসের পূর্বেপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয় তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি।

যথা- আশীতে (দাঁতে) বিষ যার = আশীবিষ,

কথা সর্বস্ব যার = কথাসর্বস্ব

পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়।

যেমন- দুই কান কাটা যার = দু‘কানকাটা,

বোঁটা খসেছে যার = বোটাঁখসা।

অনুরূপ : ছা-পোষা, পা-চাটা, পাতা-চাটা, পাতাছেঁড়া ধামাধরা ইত্যাদি।

৩. ব্যতিহার বহুব্রীহিঃ  পরস্পরের মধ্যে একই ধরণের ক্রিয়া বুঝাতে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস হয়।

যেমন-

কানে কানে যে কথা = কানাকানি

হাতে হাতে যে লড়াই = হাতাহাতি

লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ = লাঠালাঠি।

৪. নঞ্ বহুব্রীহিঃ  পূর্বপদে নঞ্ (ন,নয়,নেই) অব্যয় থেকে যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে নঞ্ বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন-

নেই বুঝ যার = অবুঝ

ন (নাই) জ্ঞান যার = অজ্ঞান।

এরূপ অজানা, বেতার, নাহক, নরুপায়, অকেজো, নির্ভুল, বেহুশ অনন্ত ইত্যাদি।

৫. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহিঃ  মধ্যপদ লোপ হয়ে যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে মধ্য পদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন- গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = গায়েহলুদ

হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতে খড়ি

বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখী

৬. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহিঃ  যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি। যথা-

একদিকে চোখ (দৃষ্টি) যার = একচোখা (চোখ+আ),

ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখো (মুখ+ও)

নিঃ (নেই) খরচ যার = নি-খরচে (খরচ+এ)।

এরূপ দোটানা, দোমনা, একগুয়ে, অকেজো, একঘরে, দোনলা, দোতলা, ঊনপাঁজুরে ইত্যাদি।

৭. অলুক বহুব্রীহিঃ  যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহ্রব্রীহি বলে। অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়। যথা-

মাথায় পাগড়ি যার = মাথায় পাগড়ি,

গলায় গামছা যার = গলায় গামছা (লোকটি)।

এরূপ : হাতে-ছড়ি, কানে-কলম, গায়ে-পড়া, হাতে-বেড়ি, মাথায়-ছাতা, মুখে-ভাত, কানে-খাটো ইত্যাদি।

৮. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহিঃ  পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। এ সমাসে সমস্তপদে আ, ই, বা, ঈ যুক্ত হয়।

যথা-

দশ গজ পরিমাণ যার = দশগজি,

চৌ (চার) চাল যে ঘরের = চৌচালা।

কিন্তু সে (তিন) তার (যে যন্ত্রের)= সেতার (বিশেষ্য)।

নিপাতনে সিদ্ধ (কোনো নিয়মের অধীনে নয়) বহুব্রীহি।

দুদিকে অপ যার = দ্বীপ,

অন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ,

নরাকারের পশু যে = নরপশু,

জীবিত থেকেও যে মৃত = জীবন্মৃতহ,

পন্ডিত হয়েও যে মূর্খ = পন্ডিতমূর্খ ইত্যাদি।

দ্বিগু সমাস - বাংলা ব্যাকরণ
Previus
তৎপুরুষ সমাস - বিস্তারিত আলোচনা (বাংলা ব্যাকরণ)
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম