অনুচ্ছেদ “যৌতুক প্রথা”
যৌতুক প্রথা
আমাদের দেশে বিরাজমান সবচেয়ে ঘৃণ্য সমাজিক প্রথা হচ্ছে যৌতুক প্রথা। এ প্রথায় কনের পক্ষ থেকে বরকে যৌতুক হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা ও দ্রবাসামগ্রী উপঢৌকন দিতে হয়। আমাদের কৃষিনির্ভর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌতুকের ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবারকে ভয়বহ আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক পিতা যৌতুক পূরণ করতে গিয়ে জমিজমা, গৃহস্থালি দ্রব্য এমনকি ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে নিঃস্ব হন। এটি একটি সফল ও উন্নতি জাতি গঠনের অন্তরায়। যৌতুকের মূল কারণ দারিদ্র্য। নারীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব, নারীদের পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক দুর্ণীতির প্রভাব এবং সামাজিক অবক্ষয়ও এর জন্য দায়ী। স্বামীকে যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে স্ত্রীকে প্রায়ই শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। বাংলাদেশের দূরবতী গ্রাম, যেগুলো পুরোপুরী আধুনিকতা স্পর্শ থেকে বঞ্চিত সেখানে এ প্রথার প্রভাব বেশি। প্রকৃতপক্ষে, যৌতুক প্রথা অত্যন্ত অপমানজনক। সমাজ থেকে এ ঘৃণ্য প্রথা নির্মূল করতে না পারলে কল্যাণমূলক সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এ সমাজিক অপরাধ দূরীকরণের জন্য কেবল আইন কিছু নিয়মের বিধিবদ্ধকরণ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। সমাজ সচেতনতা ও বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া নারী অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। সর্বোপরি, যৌতুক বিরোধী অভিযান এক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখতে পারে। এ সকল পদক্ষেপ নিতে পারলেই আমাদের সমাজের নারীরা ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবে।
Share This Post