অধ্যবসায়- বাংলা রচনা/প্রবন্ধ


অধ্যবসায়

সূচনা: পৃথিবীর সফলতার জন্য চাই সাধনা, সাধনার জন্য চাই একাগ্রতা এবং নিষ্ঠা। এ পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন, খ্যাতনামা হয়েছেন, তাঁরা সবাই অধ্যবসাইয়ের দ্বারাই হয়েছেন। অধ্যবসায়ী হতে না পারলে জীবনে পরম আকাক্সিক্ষত জিনিটি অধরাই থেকে যায়। অবিচল সংকল্প নিয়ে, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, অপরিসীম ধৈর্যের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে সাফল্য লাভ করার গুণটিই অধ্যবসায়। তাই ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন-

“কোনো কাজ ধরে যদি উত্তম সে জন হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।”

অধ্যবসায়: অধ্যবসায় হলো কোনো কাজে অবিরাম সাধনা বা ক্রমাগত প্রচেষ্টা। বার বার কোনো কাজের ব্যর্থকতার গ্লানি মুছে ফেলে নিজেকে সাফল্যের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার জন্য যে মহান প্রচেষ্টা, তারই নাম অধ্যবসায়। অর্থাৎ পরম ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রমের নামই অধ্যবসায়।

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তাঃ মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম চালিকাশক্তি অধ্যবসায়। যা মানুষের যাপিত জীবনের প্রতিনিয়ত যে সংগ্রাম , তার মূল প্রেরণা। মানবজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ অধ্যবসায় ছাড়া এ জগতে কেউ সাফল্য অর্জন করতে পারে না। পৃথিবীতে যা কিছু মহৎ , যা কিছু কল্যাণকর সবই অধ্যবসায়ের দ্বারা অর্জিত হয়েছে। তাই অধ্যবসায় মানব সভ্যতার অগ্রগতির চাবিকাঠি, ব্যক্তিগত জীবনের উন্নতির সোপান। মানবজীবনে চলার পথে নানা বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। এ সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে পায়ে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই জীবনে উন্নতি আসবে। তাই কবি কলিপ্রসন্ন ঘোষ বলেছেন-

“পরিব না একথাটি বলিও না আর কেন পরিবে না তাহা ভাব একবার। পাঁচজনে পারে যাাহ তুমিও পারিবে তাহা পার কি না পার কর যতন আবার একবার না পারিলে দেখ শতবার।”

মনে রাখতে হবে, রাতের ঘোর অন্ধকার কেটে গিয়ে যেমন দেখা দেয় সোনালি ঊষা, তেমনি বারবার চেষ্টার ফলে মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের শুকতারা। অধ্যবসায়ের দ্বারাই মানুষ এ জগতে অসাধ্য সাধন করেছে। বড় বড় শিল্পী , সাহিত্যিক , দার্শনিক, স্থপতি , সেনানায়ক, ধর্মপ্রচারক সবাই অধ্যবসায়ের ফলে সার্থকতা লাভ করেছে। তাই কবি বলেছে-

“ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো! বাঁধো বাঁধো বুক, শত দিকে শত দুঃখ আসুক আসুক।”

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়:  ছাত্রজীবনে ভবিষ্যৎ জীবন রচনায় অনুশীলন ক্ষেত্র। তাই অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত¦পূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যৎ । বিশ্বের কোটি কোটি ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষ চেয়ে আছে তাদের দিকে। আলস্যপরায়ণ এবং শ্রমবিমুখ ছাত্র-ছাত্রী কখনো বিদ্যার্জন করতে পারে না। অধ্যবসায়ী ছাত্র-ছাত্রী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও সফলতা লাভ করতে পারে। কোনো ছাত্র একবার বিফল হয়ে বসে থাকলে চলবে না, পুননায় দ্বিগুণ উৎসাহে তার অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি অধ্যবসায়ী হওয়া দাকার। কারণ তাদের সাফল্যের উপরই জাতির সাফল্য নির্ভর করে। তাই শিক্ষার্থীদের শ্লোগান হওয়া প্রয়োজন-

“আসবে পথে আঁধার নেমে তাই বলে কি রইব থেমে?”

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়: জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। ছাত্রজীবনে এ ব্যাক্তিগত জীবনে যেমন অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, একইভাবে জাতীয় জীবনেরও অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীতা কয়েছে। অধ্যবসয়ী না হয়ে কোনো জাতি উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। একমাত্র অধ্যবসায়ী জাতিই উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করতে পারে এবং সার্বিক সাফল্যের প্রতীক হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত হতে পারে। আর এতে করে জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই অনুমেয়।

অধ্যবসায় ও প্রতিভা: অধ্যবসায় ছাড়া সুপ্ত পৃতিবা বিকশিত হয় না। অধ্যবসায়ের সাথে প্রতিভা যোগ হলেই মানুষ বড় কিছু হতে পারে। অধ্যবসায় না থাকলে শুধু প্রতিভার দ্বারা কিছু হয় না। আবার অধ্যবসায় থাকলে অসাধারণ প্রতিভার অদিকারী না হলেও বড় কার্য সাধন করা যায় । জগতে বহু বিখ্যাত লোক আছেন যাঁরা প্রতিভাবান অপেক্ষা অধ্যবসায়ী ছিলেন বেশি। বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেছেন, “লোক আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না।”

অধ্যবসায় ও সাফলতা:  জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া কোনো সুবিবেচকের কাজ নয় । বলা হয়ে থাকে "Failure is the pillar of success" অর্থাৎ ব্যর্থতাই সফলতার সোপান। যে লোক বিফলতার তিক্ত অভিঞ্জতা সঞ্চয় করে অধ্যবসায়ের সাথে কাজে অগ্রসর হয় , সফলতা তার জন্য নিশ্চিত। অবিচলিত অধ্যবসায়ের দ্বারা সফলতার চরম লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব কিছু নয় । তাই বলা যায়, একমাত্র অধ্যবসায়ই মানবজীবনে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

অধ্যবসায়হীনের অবস্থা:  অধ্যবসায়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনা অকালে শেষ হয়ে যায়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জগতের কোনো কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে না। তার জীবন ধ্বংস হয়, ব্যর্থ হয়। তারা স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। সমাজের আঁস্তাকুড়ে নির্ধারিত হয় তার ঠিকানা।

অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ: জীবন সংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র অধ্যবসায় । স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয় নিরাশ মনে জঙ্গলে ঘুরছিলেন। এমন সময় একটি মাকড়সাকে সাতবার চেষ্টা করে দুটি কড়িকাঠে সুতা জড়াতে দেখে তিনি অদম্য উৎসাহে শত্রুরাজ্য সপ্তম বারের মতো আক্রমণ করে স্বদেশ উদ্ধার করেন। অর্ধ প্রথিবীর অধীশ্বর নেপোলিয়ন তাঁর জীবনের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে রেখে গিয়েছেন অধ্যবসায়ের অর্পূব নিদর্শন। কোনো কাজকে তিনি অসম্ভব বলে মনে করতেন না। তাই তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হতে পেরেছিলেন। রবার্ট পিল অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, জগদীশচন্দ্র বসু ও কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিখ্যাত হতে পেরেছিলেন। বিজ্ঞানী নিউটন নিজেই স্বীকার করেছেন, বিজ্ঞান তাঁর অবদানের মূলে আবে বহু বছরের একনিষ্ঠ এ নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম।

উপসংহার:  জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে পৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রে অদ্যবসায়ের বিকল্প নেই । লক্ষ্যে পৌঁছানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকলে শত প্রতিকূলতাও নিরস্ত করতে পারে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাইকে হতে হবে কঠোর অধ্যবসায়ী। যখনই কোনো ব্যর্থতা, কোনো দুঃখ, কোনো বিপদ আমাদের জীবনকে বিষময় করে তোলে, তখনই অধ্যবসায়ী মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের কথা স্বরণ করে তাদের আদর্শ অনুসরণ করা উচিত। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাদেরই সাহায্য করেন, যারা অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী।

শ্রমের মর্যাদা- বাংলা রচনা/প্রবন্ধ
Previus
পরিবেশষ দূষণ ও তার প্রতিকার -রচনা
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম