রচনাঃ ট্রেনে ভ্রমন


ট্রেনে ভ্রমন

ভূমিকাঃ অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার, অদেখাকে দেখার কৌতূহল মানুষের চিরন্তন। আর এ কৌতূহল পূরণের উৎকৃষ্টতা পন্থা হচ্ছে ভ্রমন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

‘‘বিপুলা এ পৃথিবীতে কতটুকু জানি। দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু রয়ে গেল অগোচরে।’’

সত্যিকার অর্থে ভ্রমণের মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপলব্ধির সুযোগ লাভ করে। আমি ও একদিন ট্রেনে ভ্রমণে গিয়ে অপূর্ব অভিজ্ঞতা অর্র্জন করেছি, যা আজ ও ভোলার নয়।

ট্রেন ভ্রমণের উদ্দেশ্যঃ আমি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী । আমার এ জীবনে আমি অনেকবার বাস ও লঞ্চ ভ্রমন করেছি। কিন্তু যখন ও ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ হয়নি। শুনেছি ট্রেন ভ্রমনে খরচ যেমন কম, তেমনি আরামদায়ক । তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার শীতের ছুটিতে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্রগাম আমার খালার বাসা। খালু সেখানে চাকরি করেন। খালা ও খালু অনেকবার বাসায় যেতে বলেছেন। কিন্তু কখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এবার বড় মামাকে নিয়ে সেখানে যাব।

যাত্রার পূর্ব প্রস্তুতিঃ রেল ভ্রমণে বের হব ভাবতেই আমি উওেজিত হয়ে উঠি। রেল ভ্রমণের যেতে হলে আমার কি কি করতে হবে মামা সব বুজিয়ে দিলেন। আমি ও মামার পরামর্শমতো কাপড় চোপড় ব্রাশ পেস্ট সব আমার স্কুল ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। কয়েকটা কমিকসের বই ও ঢুকিঢে নিলাম ট্রেনে বসে পড়ব বলে। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম কাক্সিক্ষত যাত্রার দিনটা জন্য।

ট্রেনে স্টেশনে কিছুক্ষণঃ যাত্রার দিনটা ছিল রোববার। সকাল সাতটার ছোট মামার সাথে আমি সিএনজিতে চড়ে আমাদের মগ বাজারের বাসা থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে পোছিঁ। স্টেশনে পৌঁছাতে দেখি অবাক কান্ড । যা পূর্বেই আমি বাস বা লঞ্চ কোনো স্টেশনেই দেখেনি। দেখি স্টেশনে লোকে লোকারণ্য । ট্রেনে আসছে, যাচ্ছে, যাত্রীরা উঠছে নামছে।কুলিদের হাঁকডাক, হকার ফেরিওয়ালাদের চেচাঁমেচিতে পুরো স্টেশনে মুখরিত । মামা অনেক কষ্টে আমাদের জন্য দুটো টিকেট কিনে আনলেন। আমাদের ট্রেনটি ছিল ‘গোধূলি’ এক্সপ্রেস।তখন আমাদের ট্রেন এসে পৌছেনি। স্টেশনে আমাদের মতো অনেক যাত্রী স্টেশনে জন্য অপেক্ষা করছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন এলো। মানুষকে ভিড় ঠেলে আমরা কোনো রকমে ট্রেনে উঠে পড়ি। আমি জানালার পাশে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গার্ড বাঁশি বাজাল । বাঁশি বাজার সাথে সাথে ট্রেনটি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল। এক ধরনের আনন্দ ও উওেজনার আমার বুকের ভেতরে ধড়ফড় শুরু হলো। আমি বুজতে পারলাম অবশেষে আমার স্বপ্নের ট্রেন ভ্রমন শুরু হয়েছিল। দৃশ্যাবলিঃ ঝক ঝক শব্দ ট্রেনে এগিয়ে চলছে । প্রথমে ধীরে পরে দ্রতু গতিতে । প্রথমে আমি ভয় পেয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাই। জানালা দিয়ে আমি বাইরে তাকালাম। বিভিন্ন দৃশ্যপট আমার চোখে সামনে পড়ছিল। ক্রমশ দ্রত পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। মনে হলো গতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে রাস্তার পাশের গাছপালা, ঘরবাড়ি সহ সব কিছু যেন উল্টো দিকে ছুটছে। শহর এলাকা ছেড়ে ট্রেন যখন গ্রাম এলাকা দিয়ে চলতে শুরু করল তখন অপূর্ব দৃশ্যে চোখ পড়েছিল । কোথা ও বিস্তীর্ণ মাঠ সবুজ ধানের ক্ষেত্র, কোথা ও বা বিস্তীর্ণ জলরাশি । ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রেললাইনে দাঁড়িয়ে , গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলছিল গুরুর গাড়ি। এসব দৃশ্য সত্যিই আমাকে মোহিত করে। ট্রেনটি কুমিল্লা পার হয়ে চৌদ্দগ্রাম ্উপজেলার পৌঁছলে রাস্তার পূর্ব দিকে চোখ পড়তেই দেখি উওর থেকে দক্ষিণে দিকে ছোট ছোট পাহাড়ের সারি। ট্রেনটি আর ও এগিয়ে ফেনী পার হয়ে মীরসরাইর কাছাকাছি পৌঁছালে ভারতীয় পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্যবলি আমার দৃষ্টিগোচর হয়। এসব আমার মনকে অভূতপূর্ব আনন্দের ভরে তোলে। ট্রেনটি আর ও কিছুদূর এগোলে ডান পাশে দেখতে পাই বিশাল নীল জলরাশি । মামার কাছে জানতে পারলাম এটা বঙ্গোপসাগর। আনন্দে আমি লাফিয়ে উঠলাম।এতদিন আমি শুধু বই পুস্তকে এবং মানুষের মুখে বঙ্গোপসাগরে কথা শুনে এসেছি । আজ আমি তা বাস্তবে দেখছি। আমার যে তখন কী ভালো লাগছিল। সীতাকুন্ড পার হয়ে ট্রেনটি চট্রগ্রাম শহরের মাঝ দিয়ে চলতে থাকে । আমি দেখলাম ঐতিহ্যবাহী চট্রগ্রাম বন্দর নগরীর অফিস আদালত দালান কোঠা। দেখলাম পাহাড়ের মনোমুগ্ধ দৃশ্যা ।

শেষ স্টেশনেঃ ট্রেন চট্রগ্রাম স্টেশনে কাছাকাছি পৌঁছালেই মামা আমাকে স্টেশনে নামার জন্য প্রস্তুপ হতে বললেন। বিকাল তখন প্রায় চারটা । ট্রেন থামলে আমি মামার সাথে নেমে পড়ি। কখন যে সাত ঘন্টা পার হয়ে গেল টেরই পেলাম না। রেলস্টশনে তখন ও গমগম করেছে। দেখলাম খালা ও খালু আমাদের জন্য নিজেদের গাড়ি নিয়ে প্লাটফর্মে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন। খালা আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেন। খালু আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। তারপর আমরা গাড়িতে করে খালার বাসায় চলে যাই।

রেলের ভেতরে খাবার দাবারঃ আমার জানা ছিল না যে, আমাদের দেশের ট্রেনগুলোতে খাবার দাবারের এত উওম ব্যবস্থা রয়েছে। রেলওয়ের ইউনিফর্ম পরা কিছু লোক দেখলাম মাঝে মাঝে কোল্ড ড্রিংক্রস,চিপস, চা, কফি ইত্যাদি নিয়ে হাজির হচ্ছে। আর মামা ও আমার জন্য এটা সেটা কিনে নিয়েছিল। দুপুরে মামা আমাকে খাসির মাংস ভুনা দিয়ে ট্রেনের খাবার খাওয়ালেন, নিজে ও খেলেন। এ ছাড়া ট্রেনটি বিভিন্ন স্টেশনে থামলে আমরা হকারের কাছ থেকে সিদ্ধ ডিম, কলা, বাদাম বিস্কুট ইত্যাদি কিনে খাই ।

উল্লেখযোগ্য স্থানঃ আমাদের গন্তব্য স্থান চট্রগ্রাম হলে ও পথ্যিমধ্যে আমাদের আর ও কিছুৃ উল্লেখযোগ্য স্থান দর্শকের সৌভাগ্য ঘটে। পথে আমরা নরসিংদী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা ফেনী মীর সরাই , সিতাকুন্ডের মতো আর ও অনেক বিখ্যাত এলাকা দেখেছি। প্রতিটি জায়গায় পরিবেশ ও জন জীবনে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করি। প্রতিটি অঞ্চলের মধ্যে ছায়াসুনিবিড় প্রাকৃতিক পরিবেশের অপার সৌন্দর্যের মিল ছিল।

উপসংহারঃ একটানা দীর্ঘ সাত ঘন্টার ভ্রমন ; এটি আমার জীবনে দীর্ঘতম রেল ভ্রমণ । ট্রেনে ভ্রমণেই এই সাতটি ঘন্টা আমার জীবনের জন্য সবচেয়ে সোনালি সময়। এ ভ্রমণ না করলে আমি অনেক কিছু জানা ও দেখা থেকেই বঞ্চিত হতাম। দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সোনালী সময় । এ ভ্রমন না করলে আমি অনেক কিছু জানা ও দেখা থেকে বঞ্চিত হতাম। দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের । ভ্রমণটি এতই উপভোগ্য ছিল যে, এর স্মৃতি আমার মনে চির সজীব হয়ে থাকবে।

রচনাঃ টেলিভিশন
Previus
রচনাঃ দেশভ্রমন
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম