লিঙ্গ/পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
পুরুষ বা স্ত্রী নির্দেশকে সূত্রকে ব্যাকরণে লিঙ্গ বলে। বাংলা ভাষার যে শব্দে পুরুষ বোঝায়,তাকে পুরুষবাচক শব্দ বলে।
যেমন-বাবা, ভাই, ছেলে ইত্যাদি ।
যে শব্দে স্ত্রী বোঝায়, তাকে স্ত্রী বাচক শব্দ বলে।
যেমন- মা, বোন, মেয়ে ইত্যাদি। তৎসম পুরুষকে বিশেষ্য শব্দের সঙ্গে পুরুষকে বিশেষন এবং স্ত্রী বাচক বিশেষ্য সঙ্গে স্ত্রীবাচক বিশেষণ এবং স্ত্রীবাচক বিশেষ্য শব্দের সঙ্গে স্ত্রী বাচক বিশেষণ ব্যবহৃত হয়।
যেমন- বিদ্বান লোক এবং নারী । কিন্তু বাংলা ভাষার লিঙ্গান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষণ পদে সংস্কৃত ব্যাকরণে এ নিয়ম মানা হয় না। যেমন-সংস্কৃত ‘সুন্দর বালক ও সুন্দরী বালিকা’ বাংলায় সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা।
বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দ দুই প্রকার। যথাঃ
১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থে এবং
২. পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রী জাতীয় অর্থে।
১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থেঃ আব্বা-আম্মা, চাচা-চাচি, কাকা-কাকি, জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নন্দাই-ননদ, দেওর-জা, ভাই-ভাবী, মামা-মামি ইত্যাদি।
২. পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রী জাতীয় অর্থেঃ খোকা-খুকী, পাগল-পাগলী, বামন-বামনী, ভেড়া-ভেড়ী, মোরগ-মুরগি, বালক-বালিকা, দেওর-ননদ ইত্যাদি।
বাংলা শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দঃ পুরুষবাচকের শব্দের সঙ্গে যে সব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয় , এগুলোকে স্ত্রী প্রত্যয় বলে। যেমন-্ঈ, নি, নী, আনী, ইনি, ন।
১। পুরুষবাচক শব্দের সঙ্গে ঈ, নি, নী, আনী, ইনি , ন ইত্যাদি প্রত্যয় যোগ করে। যেমন-
ক. ‘ঈ’ প্রত্যয় ( সাধারণ অর্থেঃ বেঙ্গমা-বেঙ্গমী , ভাগনে -ভাগনী।
খ. ‘নী’প্রত্যয়ঃ জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, কামার-কামারনী, মজুর-মজুরনী। তবে পুরুষবাচক শব্দের শেষে ঈ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে নী হয় এবং আগের ঈ ই হয়। যেমন-সাহসী-সাহসিনী, অভিসারী- অতিসারিণী। গ. ‘আনী’প্রত্যয়ঃ ঠাকুর-ঠাকুরানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী, নাপিত-নাপিতানী।
ঘ. ‘ইনী’ প্রত্যয়ঃ কাঙাল-কাঙালিনী, বাঘ-বাঘিনী, চাকর-চাকরানী, নাপিত-নাপিতানী।
উন-পত্যয়ঃ ঠাকুর-ঠাকরুন/ ঠাকরানী আইন-প্রত্যয়ঃ ঠাকুর-ঠাকুরাইন।
[ব্রি:দ্রঃ বাংলা কতগুলো তৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের পরে আবার স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন- অভাগা- অভাগী, অভাগিনী;ননদাই, ননদিনী; গোপ-গোপী, গোপিনী।]
২. অনেক সময় আলাদ আলাদা শব্দে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক বোঝায়। যেমন-
বাবা-মা, ভাই-বোন, কর্তা-গিন্নী, ছেলে-মেয়ে
সাহেব-বিবি, জামাই-মেয়ে, বর-কনে, দুলহা-দুলহিন, বেয়াই-বেয়াইন
তাঐ-মাঐ, বাদশা-বেগম, শুক-সারী ইত্যাদি।
৩। কতগুলো পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন- কবি-মাহিলা কবি, ডাক্তার-মহিলা ডাক্তার, সৈন্য-নারী সৈন্য, পুলিশ-মহিলা পুলিশ উকিল-মহিলা উকিল, সভ্য-মহিলা সভ্য, কর্মী- মহিলা কর্মী, শিল্পী-মহিলা বা নারী শিল্পী, মন্ত্রী-মহিলা মন্ত্রী,
৪। কতগুলো শব্দের শেষে পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দ যোগ করে পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- বোন পো-বোন ঝি ঠাকুরঝি, ঠাকুরদা-ঠাকুরমা, গয়লা-গয়লা বউ, জেলে জেলে বউ।
৫। কতগুলো শব্দের আগে নর, মদ্দা ইত্যাদি পুরুষবাচক শব্দ এবং স্ত্রী, মাদী, মাদা, ইত্যাদি স্ত্রীবাচক যোগ করে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করতে হয়। যেমন- নর/মদ্দা/হুলো বিড়াল-মেনি বিড়াল, মদ্দা হাঁস-মাদী হাঁস মদ্দা ঘোড়া-মাদী ঘোড়া, বেটাছেলে-মেয়েছেলে, পুরুষ লোক-স্ত্রীলোক/ মেয়েলোক, এঁড়ে বাছুর-বকনা বাছুর পুরুষ কয়েদী- স্ত্রী/মেয়ে কয়েদী, বলদ গরু-গাই গুরু।
৬। কতগুলো শব্দ নিত্য স্ত্রী বাচক। এগুলো পুরুষবাচক শব্দ নেই। যেমন-সতিন,সৎমা, এয়ো, সধবা দাই।
তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের স্ত্রী বাচক শব্দ তৎসম পুরুষবাচক শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, নী, ইকা ইত্যাদি প্রত্যায়যোগে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন-
১। ‘আ’ প্রত্যয় সাধারণ অর্থেঃ মৃত-মৃতা, বিবাহিত-বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-ব্দ্ধৃা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল- চপলা নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা ইত্যাদি। জাতি বা শ্রেণিবাচক অর্থে অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া, শূদ্রা-শূদ্রা ইত্যাদি।
২। ‘ঈ’ প্রত্যয় সাধারন অর্থেঃ নিশাচার-নিশাচারী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রাজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী ইত্যাদি। জাতি বা শ্রেণিবাচক অর্থে সিংহ-সিংহী, ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী, মানব-মানবী, বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী ইত্যাদি।
৩। ‘ইকা’ প্রত্যয়ঃ শব্দের শেষে ‘অক’ থাকলে ‘অক’ এর স্থলে ‘ইকা’ হয়। যেমন- বালক-বালিকা, গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা, পাঠক-পাঠিকা, সেবক-সেবিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা,
ক্ষুদ্রার্থক (ইকা) প্রত্যয় নাটক-নাটিকা, মালা-মালিকা, গীত-গীতিকা, পুস্তক-পুস্তিকা।
৪।‘নী’ প্রত্যয় জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, কামার-কামারনী, মজুর-মজুরনী।
৫। ঈনী; ‘নী’ প্রত্যয়ঃ পুরুষবাচক শব্দের শেষে ঈ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে নী হয় এবং আগে ঈ, ই হয়। যেমন- মেধাবী- মেধাবিনী, মায়াবী-মায়াবিনী, পরীক্ষার্থী-পরীক্ষার্থিনী কুহক-কৃহকিনী, যোগী-যোগনী।
৬। ‘আনী’প্রত্যয় ঠাকুর-ঠাকুরানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী, মাতুল-মাতুলানী, নাপিত-নাপিতানী, ইন্দ্র-ইন্দ্রানী, আচার্য-আচর্যানী, শূদ্র-শূদ্রানী, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়ানী আনী-প্রত্যয়যোগে কোন কোন সময় অর্থের পার্থক্য ঘটে। যেমন- অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অর্থে), হিম-হিমানী(জমানো অর্থে।)
৭। বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ
ক. পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ থাকলে ‘তা’ এর স্থলে ‘স্ত্রী’ যোগ করে স্ত্রী বাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন- কর্তা-কত্রী, নেতা-নেত্রী, শ্রোতা-শ্রোত্রী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ধাতা, ধাত্রী।
খ.পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত্, বান্, মান্, ঈয়ান থাকলে যথাক্রমে অতী, বতী, মতি, ঈয়সী হয়। যেমন- সৎ-সতী, মহৎ-মহতী, গুনবান-গুনবতী রূপবান-রূপবতী, শ্রীমান-শ্রীমতি, বুদ্বিমান-বুদ্বিমতী,
গ. কোন কোন পুরুষবাচক শব্দযোগে বিশেষ নিয়মে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন- সম্রাট - সম্রাজ্ঞী, সভাপতি-সভানেত্রী, শিক্ষক-শিক্ষায়িত্রী দেবর- জা বন্ধু-বান্ধবী, গুনবান-গুনমতী,
৮।
ক. কতগুলো শব্দ কেবল পুরুষ বোঝায়। যেমন-কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার।
খ. কতগুলো শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ দ্বারা সাধিত হয়। যেমন- অসূর্যস্পশ্যা, অরক্ষনীয়, সপত্নী।
গ. কতগুলো বাংলা শব্দ বিদেশী স্ত্রীবাচক শব্দ দ্বারা সাধিথ হয়। যেমন- খান-খানম, মরদ-জেনানা, মালেক-মালেকা,
ঘ. কতগুলো বাংলা শব্দ আছে পুরুষ ও স্ত্রী দুই বোঝায়।যেমন-জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু ইত্যাদি।
ঙ. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ রয়েছে। যেমন- দেবর-ননদ,জা; ভাই-বোন,ভাবী; শিক্ষক-শিক্ষায়িত্রী (পেশা অর্থে), বন্ধু-বান্ধবী,বন্ধুপত্নী, দাদা-দিদি,বৌদি ইত্যাদি। ৯। ক. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের ‘বিশেষণ’ ও স্ত্রীবাচক হয় ন্ াযেমন- সুন্দর ছেলে-সুন্দর মেয়ে, সুন্দর বলদ-সুন্দর গাই ইত্যাদি।
খ. বিধেয় বিশেষণ অর্থাৎ বিশেষ্যের পরবর্তী বিশেষণ ও স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন-মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে ( পাগলী হবে না)। মিতু ভয়ে অস্থির ( অস্থির হবে না।)
গ. কুল-উপাধির ও স্ত্রীবাচকতা রয়েছে। যেমন-ঘোষ(পুরুষ)-ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে) ।
Share This Post