বাংলা রচনাঃ শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার


শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার

ভূমিকাঃ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক বিস্ময়কর অবদান কম্পিউটার । সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ আপন উদ্ভাবনী ক্ষমতার বলে নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের উচ্চ প্রযুক্তি সমন্বিত যে আবিষ্কার পৃথিবীকে অতীতের যে কোনো নির্দিষ্ট শতাব্দীর চেয়ে বহুগুনে অগ্রসর করে ভবিষ্যতের এক অনন্ত সম্ভবনার দ্বারা উন্মেচন করে দিয়েছে সেটি হলো কম্পিউটার।দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য । এক অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ও প্রয়োজনীয়তা । কম্পিউটারকে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতার কথা কল্পনা ও করা যায় না। মূলত পঞ্চাশের দশকে কম্পিউটার আধুনিক প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলে ও বর্তমানে এর ব্যাপক বিস্তুতি ঘটেছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ের পাশাপাশি জাতীয় মেরুদন্ড শিক্ষাক্ষেত্রে ও কম্পিউটারের অবাধ বিচরণ।

কম্পিউটারঃ  গ্রিক শব্দ  “Computer” থেকে  ‘‘Computer ’’ শব্দের উৎপওি ; যার আভিধানিক অর্থ গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র। কিন্তু আজকাল কম্পিউটারকে কেবল গণনাকারী বলা চলে না। এখন তা এমন এক ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ধারণা দেয় বা অগণিত তথ্য বা উপাও গ্রহন করে অত্যন্ত দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ, গণনা বিশ্নেষণ ইত্যাদি করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করতে পারে।কম্পিউটার আসলে এক ধরনের যন্ত্রমস্তিষ্ক। মানুষ যেমন করে মগজে ধরে রাখা স্মৃতি, অভিজ্ঞতা তথ্য ও তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করে কম্পিউটার কাজ ও ঠিক তেমনি।

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির অনন্য বাহন কম্পিউটার। আজকের উন্নত বিশে^র সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল । কম্পিউটারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা এবং জ্ঞান রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষেত্রে বিচরণ করা যায়। বিস্ময়কর ক্ষমতাধর এ যন্ত্রটি শিক্ষা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে । এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিচে তুলে ধরা হলো-

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ   আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির অনন্য বাহন কম্পিউটার । আজকের উন্নত বিশে^র সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল । কম্পিউটারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় তথা সংগ্রহ করা এবং জ্ঞান রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে বিচরণ করা যায়। বিস্ময়কর ক্ষমতাধর এ যন্ত্রটি শিক্ষা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিচে তুলে ধরা হলো-

১.শিক্ষাদানঃ  কোনো একটি কাহিনী পড়া বা শোনার চেয়ে ঐ কাহিনী নিয়ে তৈরী সিনেমা বা চলচ্চিত্র মনে অনেক বেশী রেখাপাত করে। কম্পিউটারের সাহায্যে শিক্ষাদান বা গ্রহনের ক্ষেত্রে এর সবকটি সুযোগ কাজে লাগানো যায়। নিচের ক্লাসে বর্ণ পরিচয়, গল্প ইতিহাস ইত্যাদি র্কাটুনের মাধ্যমে তুলে ধরলে কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী হয়। উপরের ক্লাশে ও বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়গুলো রঙিন চিত্রে তুলে ধরে তুলে পাঠধান করা যায়। আর বিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যবহারিক কার‌্যাবলি, প্রাণিজগতের বিচিত্র জীবনযাপন প্রণালি, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ কম্পিউটারের সচল চিত্রে তুলে ধরা যায়। মাত্র দু-একটি বোতাম টিপলেই যখন প্রয়োজন , তখনই দেখা শোনা জানা যায় জন্ম বা মৃত্যুহার রাজধানীর নাম বা শিক্ষার হার প্রভৃতি সব তথ্য । কাজেই প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতির চেয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদান যে অধিক কার্যকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

২. তথ্য সংরক্ষণঃ তথ্য সংরক্ষণের এক সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ভান্ডার হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটারে যে কোনো তথ্য অনায়াসে নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়। যে কোনো তথ্য উদ্ধারে সক্ষম কম্পিউটারে উপাওগুলো ইচ্ছামাফিক সাজিয়ে রাখা যায়। কম্পিউটারের স্মুতিতে গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষিত যে কোনো তথ্যের নিরাপওার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকে।প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কারণে দিন দিন কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণের অভিনব পন্থা আবিষ্কৃত হচ্ছে। ফলে ক্রমেই বেড়ে চলছে এর উপযোগিতা।

৩. যোগাযোগঃ কম্পিউটারের কল্যাণে সমগ্র পৃথিবী চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক অভিনব বিল্পব সাধন করেছে কম্পিউটার। কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী সহজেই অন্য কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা বিশে^র যে কোনো অত্যাধুনিক লাইব্রেরির সাথে অনায়াসে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছে ইন্টারনেটের সাহায্যে।ফলে সে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছে প্রত্যাশিত তথ্য বা সংবাদ। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ফিচার অনায়াসেই একজন শিক্ষাথী কাজে লাগাতে পারে কম্পিউটারের কল্যাণে। তাছাড়[া এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার উওরোওর খুলে দিচ্ছে নতুন দিগন্তের দ্বার।

৪. পরীক্ষার ফলাফল তৈরী ও মূল্যায়নঃ বর্তমানে দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি কম্পিউটার নির্ভর । পরীক্ষার খাতা দেখা, ফলাফল তৈরী এ প্রকাশ করার সমুদয় গুরুদায়িত্ব কম্পিউটারের। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার দ্রুত ও নির্ভুলতার সর্ম্পূণ নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। ফলে শিক্ষা পদ্ধতিতে এসেছে যুগোপযোগী বৈপ্লিবিক পরিবর্তন । কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতির প্রতি আস্থা রেখেই দেশে প্রচলিত হয়েছে ফলাফল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গ্রেডিং পদ্ধতি আর এ জটিল কাজটি সম্পাদন কম্পিউটার ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।

৫. উচ্চশিক্ষাঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এবং বুয়েটসহ বিশে^র অনেক দেশেই আজ উচ্চশিক্ষায় কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। প্রোগ্রাম করা বিভিন্ন সফট্ওয়ারের ব্যবহারিক বিষয়সহ প্রয়োজনীয় পাঠ আজ ঘরে বসেই কম্পিউটার মনিটরে দেখে শেখা যায়।

৬. শিক্ষামূলক গবেষণাঃ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, কৃষি,চিকিৎসা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির পূর্বশর্ত হলো গবেষণা । এজন্য প্রতিটি দেশেই রয়েছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মুশকিল হলো সংশিষ্ট বিষয়ের সর্বশ্রেষ্ট তথ্য সবসময় এক জায়গায় পাওয়া যায় না। এর সমাধানের এগিয়ে এসেছে কম্পিউটার। বিষয় শিরোনামসহ প্রতিটি গবেষণা মূলক প্রকাশনার সার সংক্ষেপ কম্পিউটারে তুলে রেখে প্রয়োজনের সময় দু এক মিনিটেই তা খুঁজে দেখা সম্ভব, সম্ভব কম্পিউটার নেটওয়াকিং- এর মাধ্যমে দেশি বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্টানের মধ্যে তথ্যের আন্তঃপ্রবাহ।

৭. শিক্ষার বাহন পুস্তক প্রকাশনাঃ সিসার অক্ষর দিয়ে কম্পোজ করে হস্তচালিত লেটার প্রেসে যেই বইটি বের করতে এক বছর লাগত, কম্পিউটারের কল্যাণে সর্ম্পূণ আটোমেটিক মেশিনে এখন তা দু একদিনে বের করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে নেই কোনো অস্পষ্ট ছাপা বা ভাঙা অক্ষরের বিড়ম্বনা, নেই লাইন আকাঁবাঁকা হওয়ার ভয় বা লাইরস্পেস ছোট- বড় করার ঝামেলা। হাজার পৃষ্ঠার কম্পিউটারের স্মৃতিতে রেখে দেয়া যায়, প্রয়োজনে পুনঃমুদ্রণেও করা যায় তখন। পুস্তক প্রকাশনার সূতিকাগার রাজধানী ঢাকার বাংলাবাজার আজ তাই অনেকটাই কম্পিউটার নির্ভর।

৮. সংবাদ প্রচার ও প্রকাশনাঃ  শিক্ষার অন্যতম হাতিয়ার সংবাদের প্রচার ও প্রকাশে কম্পিউটাােরর অবদান অনস্বীকার্য। টিভির প্রতিদিনকার সচিত্র সংবাদ পরিবেশনে ও সংবাদপত্রের প্রকাশনায় কম্পিউটার আজ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃতি হচ্ছে।

বাংলাদেশে কম্পিউটার শিক্ষাঃ  আশিক দশকে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের আবির্ভাব হলেও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এখাবে আনুষ্ঠানিক ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটর শিক্ষা শুরু হয়। বর্তমান বাংলাদেশে কম্পিউটারের দ্রুত ও ব্যাপক বিকাশ ঘটছে। কম্পিউটার শিক্ষাও যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। আমাদের দেশে কম্পিউটার বিজ্ঞান। অধ্যয়নের সুযোগ অবশ্য এখনো যথেষ্ট সীমিত। কেবল ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্বিবদ্যালংসহ গুটিকয়েক বেসবকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও সুযোগ পেয়ে থাকে। এখানে থেকে যারা শিক্ষা লাভ করেছে তাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি করছে।

বাংলাদেশে শিক্ষার সর্বস্তরে কম্পিউটারের ব্যবহারঃ  উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হলৌ আমাদের দেশে এখনো তা পুরোপুরিভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমাদের দেশে কেবল উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার হয়ে থাকে। মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষার প্রচলন নেই বলেই চলে। অবশ্য ইতোমধ্যে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরদের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সিলেবাসে কম্পিউটার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের কম্পিউটার শিক্ষার প্রচলনে এটা একটা মহতী উদ্যোগ।

উপসংহারঃ জাপান, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, প্রভৃতি উন্নত বিশে^র প্রতিটি দেশে আজ শিক্ষার মাধ্যম কম্পিউটার এমনকি পড়াশোনার এমন সব পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত হয়েছে যে শিক্ষার্থী কম্পিউটারের সাথে কথোপকথনের মতোই জানতে চেয়ে জনাব নিজে নিজেই অনেক কিছু শিখতে পারে। কম্পিউটারের সাহায্যে ইন্টার এ্যাকটিভ পদ্ধতি, নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পদ্ধতিতে শিক্ষাদান ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ঘরে বসেই আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ বিদেশের অনলাইন ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। ঘরে বসেই আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশবিদেশের অনলাইন ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। সে দিন আর বেশি দূরে নয় যে দিন এ একটিমাত্র যন্ত্র ব্যবহার করেই মানুষের তার সকল প্রকার প্রয়োজন পূরণ করতে পারব।

বাংলা রচনাঃ যৌতুক প্রথা
Previus
রচনাঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম