ক্রিয়াপদ - বিস্তারিত


ক্রিয়াপদ

ক্রিয়াপদ

যে পদ দ্বারা হওয়া, যাওয়া, খাওয়া, পড়া ইত্যাদি কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে। অর্থাৎ বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোনো পুরুষ কর্তৃক নির্দিষ্ট কালে কোনো কার্যের সংঘটন বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন- শরীফ বই পড়ছে । সে এবার পরীক্ষা দিবে। বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ হলো ক্রিয়াপদ । কাল ও পুরুষভেদে ক্রিয়ার পরিবর্তন হয়, কিন্তু বচনভেদে হয় না। ক্রিয়াপদের গঠনঃ  ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করা হয়। যেমন- ‘পড়ছে’-পড় ‘ধাতু’ + ছে ‘বিভক্তি’। অনুক্ত ক্রিয়াপদঃ ক্রিয়াপদ বাক্যগঠনের অপরিহার্য অঙ্গ। ক্রিয়াপদ ভিন্ন কোনো মনোভাবই সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। তবে কখনো কখনো বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য বা অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন- ইনি আমার ভাই = ইনি আমার ভাই (হন)। আজ প্রচন্ড গরম= আজ প্রচন্ড গরম ( অনুভূত হচ্ছে) তোমার মা কেমন ? = তোমার মা কেমন (আছেন) ? বাক্যে সাধারণত ‘হু’ এবং ‘আছ’ ধাতু গঠিত ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে। ক্রিয়ার প্রকারভেদঃ  বিবিধ অর্থে ক্রিয়াপদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ১. সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়া পদকে দু্ইভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ ক. সমাপিকা ক্রিয়া , এবং খ. অসমাপিকা ক্রিয়া। ক. সমাপিকা ক্রিয়াঃ  যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের (মনোভাবের) পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- ছেলেরা খেলা করছে। এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। খ. অসমাপিকা ক্রিয়াঃ  যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- ১. প্রভাতে সূর্য উঠলে........................ ২. আমার হাত মুখ ধুয়ে........................ ৩. আমরা বিকেলে খেলতে .................... এখানে, ‘উঠলে’ ‘ধুয়ে’ এবং ‘খেলতে’ ক্রিয়াপদগুলো দ্বারা কথা শেষ হয়নি; কথা সম্পূর্ণ হতে আর ও শব্দের প্রয়োজন। তাই এ শব্দগুলো অসমাপিকা ক্রিয়া। উপযুক্ত বাক্যগুুলো পূর্ণ মনোভাব অসমাপিকা ক্রিয়া। ১. প্রভাতে বাক্যগুলো পূর্ণ মনোভাব জ্ঞাপক করলে দাঁড়াবে- ২. আমরা হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম। ৩. আমরা বিকেলে খেলতে যাই। পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করতে হলে, সমাপিকা ক্রিয়া অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ইয়া (পড়িয়া), হলে (পড়িলে), ইতে (পড়িতে), এ (পড়ে), লে (পড়লে), তে (পড়তে) বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদ অসমাপিকা ক্রিয়া। ২. সকর্মক ক্রিয়া ও অকর্মক ক্রিয়াঃ  যে ক্রিয়ার কর্মপদ আছে, তা-ই সকর্মক ক্রিয়া। ক্রিয়ার সাথে কী বা কাকে প্রশ্ন করলে যে উওর পাওয়া যায়, তা-ই ক্রিয়ার কর্মপদ। কর্মপদযুক্ত ক্রিয়াই সকর্মক ক্রিয়া। যেমন- বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন। প্রশ্নঃ  কী দিয়েছেন ? উওরঃ  কলম (কর্মপদ)। প্রশ্নঃ  কাকে দিয়েছেন ? উওরঃ  আমাকে (কর্মপদ)। ‘দিয়েছেন’ ক্রিয়াপদটির কর্মপদ থাকায় এটি সকর্মক ক্রিয়া। যে ক্রিয়াই কর্ম নেই, তা অকর্মক ক্রিয়া। যেমন-মেয়েটি হাসে।‘কী হাসে বা কারে হাসে’ প্রশ্ন করলে কোনো উওর হয় না। কাজের ‘হাসে’ ক্রিয়াটি অকর্মক ক্রিয়া। দ্বিকর্মক ক্রিয়াঃ  যে ক্রিয়ার দুটি কর্মপদ থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্মপদটিকে মুখ্য বা প্রদান কর্ম এবং ব্যক্তিবাচক বর্মপদটিকে গৌণ কর্ম বলে। বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন বাক্যে ‘কলম’ (বস্তু) মুখ্য কর্ম এবং ‘আমাকে’ ব্যক্তি গৌণ কর্ম। সমধাতুজ, কর্মঃ  বাক্যের ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে ঐ কর্মপদকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাত্বর্থক কর্মপদ বলে। যেমন-আর কত খেলা খেলবে। মূল ‘খেল’ ধাতু থেকে ক্রিয়াপদ ‘খেলবে’ এবং কর্মপদ ‘খেলা’ উভয়ই গঠিত হয়েছে। তাই ‘খেলা’ পদটি সমধাতজি বা ধাত¦র্থক কর্ম। সমধাতুজ কর্মপদ অকর্মক ক্রিয়াকে সকর্মক করে । যেমন- এমন সুখের মরণ কে মরতে পারে ? বেশ এক ঘুম ঘুমিয়েছি। আর মায়াকান্না কেঁদো না গো বাপু। ৩. প্রযোজক ক্রিয়াঃ  যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনা বা চালনায় অন্য কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয়, সেই ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। (সংস্কৃত ব্যাকরণের একে ণিজন্ত ক্রিয়া বলা হয়) প্রযোজক ক্রিয়াঃ  যে ক্রিয়া প্রযোজনা করে, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। প্রযোজ্য কর্তাঃ  যাকে দিয়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন-
প্রযোজক কর্তা প্রযোজ্য কর্তা   প্রযোজক ক্রিয়া
মা শিশুকে   চাঁদ দেখাচ্ছেন।
(তুমি) খোকাকে   কাঁদি ও না।
সাপুড়ে সাপ   খেলায়।
জ্ঞাতব্যঃ  প্রযোজক ক্রিয়া রূপে ব্যবহৃত হলে অকর্মক প্রযোজক ক্রিয়া সকর্মক হয়। প্রযোজক ক্রিয়ার গঠনঃ  প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু = মূল ক্রিয়ার ধাতু + আ। যেমন- মূল ধাতু √হাস্ + আ = হাসা (প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু )। হাসা + চ্ছেন বিভক্তি = হাসাচ্ছেন (প্রযোজক ক্রিয়া)। ৪. নামধাতু ও নামধাতুর ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বনাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয়যোগে সে সব ধাতু গঠিত হয়, সেগুলোকে নামধাতু বলা হয়। নামধাতুর সঙ্গে পুরুষ বা কালসূচক ক্রিয়া বিভক্তি যোগে নামধাতুর ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন- ক. বেত (বিশেষ্য) + আ (প্রত্যয়) = বেতা ( নামধাতু )। যেমন- শিক্ষক ছাত্রটিকে বেতাচ্ছেন (নামধাতুর ক্রিয়াপদ)। খ. বাঁকা (বিশেষণ) + আ (প্রত্যয় = বাঁকা (নামধাতু)। যেমন- কঞ্চিটি বাঁকিয়ে ধর (নামধাতুর ক্রিয়াপদ)। গ. ধ্বনাত্মক অব্যয়ঃ  কন কন-দাঁতটি ব্যথায় কনকনাচ্ছে । ফোঁস-অজগরটি ফোঁসাচ্ছে। আ-প্রত্যয় যুক্ত না হয়ে ও কয়েকটি নামধাতু নামধাতু বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতুর মতো ব্যবহৃত হয়। যেমন- ফল-বাগানে বেশ কিছু লিচু ফলেছে। টক-তরকারি বাসি হলে টকে। ছাপা-আমার বন্ধু বইটা ছেপেছে। ৫. যৌগিক ক্রিয়া একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন- ক. তাগিদ দেওয়া আর্থেঃ           ঘটনাটা শুনে রাখ। খ. নিরস্তরতা অর্থেঃ                  তিনি বলতে লাগলেন। গ. কার্যসমাপ্তি অর্থেঃ                 ছেলেমেয়েরা শুয়ে পড়ল। ঘ. আকস্মিকতা অর্থেঃ               সাইরেন বেজে উঠল। ঙ. অভ্যস্ততা অর্থেঃ                  শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে। চ. অনুমোদন অর্থেঃ                  এখন যেতে পার। ৬. মিশ্র ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে র্ক, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়, ধর, মার, প্রভৃতি ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদ বিশেষ বিশেষ অর্থে মিশ্র ক্রিয়া গঠন করে। যেমন- ক. বিশেষ্যের উওর (পরে)                   : আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। এখন গোল্লায় যাও। খ. বিশষণের উওর ( পরে)                  : তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম। গ. ধ্বনাত্মক অব্যয়ের উওর (পরে)      :  মাথা ঝিম্ ঝিম্ করছে। ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

Gazi Online School.com is one of the biggest outstanding Online learning site in Bangladesh. This site has been a hub for knowledge seekers. It is growing with full potential. The lectures are designed for everybody to understand. The best thing about Gazi Online School.com is that it has a panel of teachers who are expert and excelled in their own educational field. The news tab has all the latest news to keep you up to date. Find your desired education at Gazi Online School.com and be a part of the future of education! The study module is divided into different parts – Bangla II, English II, RAJUK College Admission, Cadet College Admission, PEC, JSC, SSC, HSC, NTRCA, government job exams, bank jobs and so forth. Under all these sections, you will find study materials, recent questions and model tests. You can read, practice, take a quiz or sit for a model test for your target exam. The site is a hub for students who want to excel in their Academic and different competitive exams.
ক্রিয়ার ভাব
Previus
অব্যয় পদ -বিস্তারিত
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম