কর্তৃকারক (বিস্তারিত)


কর্তৃকারক

ক্রিয়া সম্প্রদানকারীকে কর্তা বল্। কর্তাকে ব্যাকরণের কর্তৃকারক বলে। বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্প্রাদন করে, তাকে কর্তৃকারক বলে যেমন- শরীফ বই পড়ে। এখানে ‘শরীফ’ কর্তৃকারক।

ক্রিয়াকে ‘কে’ প্রশ্ন করলে সাধারণত যে উওর পাওয়া যায়, তাই কর্তৃকারক।

কর্তৃকারকের প্রকারভেদঃ 

ক. কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্প্রদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন-


১। মুখ্য কর্তাঃ  যে নিজেই ক্রিয়া সম্প্রাদন করে , সে মুখ্য কর্তা বলে। যেমন- ছেলেরা ফুটবল খেলছে । মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। ২। প্রযোজক কর্তাঃ  মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায় , তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরন পড়াচ্ছেন।

৩। প্রযোজ্য কর্তাঃ  মূল কর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলা হয়। যেমন- রাখাল গুরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন।

৪। ব্যাতিহার কর্তাঃ  কোনো বাক্যে যে দুটি কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্প্রাদন করে, তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন- বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজার রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।

৫। সমধাতুজ কর্তাঃ  একই ধাতু থেকে উৎপন্ন কর্তা ও ক্রিয়াপদ বাক্যে ব্যবহৃত হলে, তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে। যেমন- গায়ক গান করেন। বাদক বাজনা বাজায়।

৬। নিরপেক্ষ কর্তাঃ  সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার বিভিন্ন কর্তা হলে, তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে। যেমন- সে আসলে আমি যাব।

খ. বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকম হতে পারে। যেমন -

১। কর্মবাচ্যের কর্তা (কর্মপদরে প্রাধান্যসূচক বাক্যে) : পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।

২। ভাববাচ্যের কর্তা ( ক্রিয়ার প্রাধান্য সূচক বাক্যে ) : আমার যাওয়া হবে না।

৩। কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা ( বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়) : বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।

কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহারঃ 

১. প্রথমা বিভক্তিঃ  রহিম বই পড়ে। জামান ভাত খায়।

২. দ্বিতীয় বিভক্তিঃ  তোমাকে আসতে হবে। কবিরকে যেতে হবে।

৩. তৃতীয় বিভক্তিঃ  ফেরদৌসী কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে । জনতা কর্তৃক ডাকাত ধৃত হয়েছে ।

৪. চতুর্থী বিভক্তিঃ  রতনকে এটি দাও।

৫. পঞ্চমী বিভক্তিঃ  আমা হতে এ কাজ হবে না সাধন।

৬. ষষ্ঠী বিভক্তিঃ  আমার খাওয়া হয়নি। তোমার যাওয়া হবে না।

৭. সপ্তমী বা এ বিভক্তিঃ গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল। বাপে না জিজ্ঞাসে, মায়ে না সম্ভাষে। পাগলে কী না বলে , ছাগলে কী না খায়। বাঘে-মহিষে খানা একঘাটে খাবে না।

য়-বিভক্তিঃ ঘোড়ায় গাড়ি টানে।

তে-বিভক্তিঃ গুরুতে দুধ দেয়। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কীসে ?

বিভক্তির সহ কর্তৃকারকের কিছু উদাহরণঃ 

অর্থ অনর্থ ঘটায় - কর্তায় শূণ্য।

আমার খাওয়া হলো না - কর্তায় ৬ষ্ঠী।

আমাকে যেতে হবে - কর্তায় ২য়া।

আমা হতে এ কাজ হবে না সাধন - কর্তায় ৫মী।

তোমা দ্বারা এ কাজ হবে না সাধন - কর্তায় ৩য়া।

কোকিল ডাকে - কর্তায় শূণ্য।

গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল - কর্তায় ৭মী।

গুনহীন চিরদিন থাকে পরধীন - কর্তায় শূণ্য।

ঘোড়ায় গাড়ি টানে - কর্তায় ৭ মী।

ঘোড়া ঘাস খায় - কর্তায় শূণ্য।

চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী - কর্তায় ৭ মী।

রাখাল গরুর পাল, লয়ে যায় মাঠে - কর্তায় শূণ্য ।

তার দ্বারা একাজ হবে না - কর্তায় ৩য়া।

আমার কুরআন পড়া হয়েছে - কর্তায় ৬ষ্ঠী।

বাঘ মানুষ মারে - কর্তায় শূণ্য।

তোমাকে যেতে হবে - কর্তায় ২ য়া।

তোমার যাওয়া উচিত - কর্তায় ৬ষ্ঠী ।

তার ঢাকা যাওয়া হচ্ছে না - কর্তায় ৬ষ্ঠী।

দশে মিলে করি কাজ - কর্তায় ৭মী।

পুলিশ চোর ধরেছে - কর্তায় শূণ্য।

পাখি সব করে রব রাতি - কর্তায় শূণ্য।

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে - কর্তায় ৭ মী।

বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খায় - কর্তায় ৭ মী।

বাঁশি বাজে - কর্তায় শূণ্য ।

লোকে বলে - কর্তায় ৭মী।

সকলকে মরতে হবে - কর্তায় ২য়া।

মানুষে ভাব এক, হয় আর এক - কর্তায় ৭ মী।

সূর্য উঠলে অন্ধকার দূর হয় - কর্তায় শূণ্য।

কর্মকারক (বিস্তারিত)
Previus
কারক ও বিভক্তি
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম